ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৫

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৫

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৮৭২ জন। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১১৩ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ২১৩ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ গত রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্তডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে এই সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৬৭ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৩১, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১১৫, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৯১, খুলনা বিভাগে ১০ জন রয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে একজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চলতি সেপ্টেম্বর মাসে এসে ক্রমেই ভয়ানক আকার ধারণ করছে ডেঙ্গু। ২০২৩ সালের মতো চলতি বছরে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ না করলেও ঢাকা মহানগরীর বাইরে অধিক আক্রান্তের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর ৫৫ শতাংশই ঢাকার বাইরে। তবে শতকরা ৫৭ শতাংশ মৃত্যু ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৩৪২ জন। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে ৮ হাজার ৬৯৯ জন। এ ছাড়া রাজধানীর দুই সিটি এলাকার বাইরে ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগে ১০ হাজার ৬৪৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃত ১০৮ জনের মধ্যে দুই সিটিতে ৭২ জন এবং রাজধানীর বাইরে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত বছর এই সময় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যা ছিল এক লাখ ৬৪ হাজার ৫৬২, আর মৃত্যু ৮০৪।

তবে গত বছরের আক্রান্তের বিবেচনায় মৃত্যুর হার ছিল দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর চলতি বছরে এ হার দশমিক ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২৪ সালে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যু অধিক হয়েছে।

২০২৪ সালের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বছরের শুরু থেকেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে এর ঊর্ধ্বগতি প্রবণতা দেখা যায় জুলাই মাসে। আর চলতি মাসে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। শুধুমাত্র সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৬ দিনেই ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ হাজার ৫০১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের।

ডেঙ্গুর মাসভিত্তিক আক্রান্তের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৫৫ জন আক্রান্ত ও ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৩৯ ও মৃত্যু ৩, মার্চে আক্রান্ত ৩১১ ও মৃত্যু ৫, এপ্রিলে আক্রান্ত ৫০৪ ও মৃত্যু ২, মে মাসে আক্রান্ত ৬৪৪ ও মৃত্যু ১২, জুনে আক্রান্ত ৭৯৮ ও মৃত্যু ৮ জনের মৃত্যু হয়। জ্বর ছেড়ে গেলে রোগীরা ভাবেন তারা এখন ভালো। কিন্তু ওই সময়টাতেই জটিলতা শুরু হয়। তারা যদি হাসপাতালে আসতে দেরি করেন, তাহলে তরল সংকটে রক্ত না পেয়ে অর্গানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন আইসিইউ সাপোর্ট দিয়েও রোগীকে বাঁচানো যায় না। এ ধারায় পরিবর্তন আসে জুলাই মাসে। জুলাইয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৬৯ জনে। এ সময় মৃত্যু ঘটে ১২ জনের। আগস্টে আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৫২১ ও মারা যায় ২৭ জন। আর চলতি মাসের প্রথম ১৬ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ হাজার ৫০১ জন এবং মারা গেছেন ২৫ জন। আক্রান্তের এলাকাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫ হাজার ২৮ জন রোগী ভর্তি হয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। ৪ হাজার ৭১১ জন ডেঙ্গু রোগী নিয়ে পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৩ হাজার ৫০৭ জন, ঢাকা বিভাগে ২ হাজার ২২ জন, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৯১২ জন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪৫ জন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে তিনজন, খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৩৬৯ জন, ময়মনসিংহে ৩৯৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩২ জন, রংপুর বিভাগে ১০৬ জন, সিলেট বিভাগে ১১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদিকে মৃতের তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে, যা মোট মৃত্যুর ৫৭ শতাংশ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১০ জন, বরিশালে ১০ জন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ১৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬, ঢাকা বিভাগে তিনজন, খুলনায় পাঁচজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৯ হাজার ৩৪২ জন। যাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী। আর এখন পর্যন্ত মৃত ১০৮ জনের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী এবং ৪৬ দশমিক ৩০ শতাংশ পুরুষ। অর্থাৎ আক্রান্ত কম হলেও মৃত্যু হার বেশি নারীদের। মৃত্যুর বিষয়ে জানতে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বেশকিছু বায়োলজিক্যাল কারণ রয়েছে। ডেঙ্গুর চারটি টাইপ রয়েছে। এর মধ্যে টাইপ-থ্রি মারাত্মক রকমভাবে সংক্রমণ ঘটায়। যাদের টাইপ-থ্রি দ্বারা সংক্রমণ হয়, তাদের কারো কারো জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। আক্রান্ত হওয়ার পর ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি জরুরি। যাদের ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হয় তাদের ভালো ও দ্রুত ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন। বিশেষত যাদের আইভি ফ্লুইডের সমস্যা হয় তাদের অতিদ্রুত হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর শুরু হয়। জ্বর ছেড়ে গেলে রোগীরা ভাবেন তারা এখন ভালো। কিন্তু ওই সময়টাতেই জটিলতা শুরু হয়। তারা যদি হাসপাতালে আসতে দেরি করেন, তাহলে তরল সংকটে রক্ত না পেয়ে অর্গানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত