হাসিনা সরকারের আমলে

পাচার হওয়া দুই লাখ কোটি টাকার খোঁজে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্পদের তথ্য তদন্তে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্ট মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান।

তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে এবং এরপরই লন্ডনকে ঢাকার পক্ষ থেকে এই অনুরোধ জানানো হয়। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের তদন্তে সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্যের সাথে যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশ।

মূলত ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী সরকারের সদস্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরকদমে নেমেছে বাংলাদেশের নতুন সরকার। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান মনসুর বলেছেন, হাসিনার শাসনামল ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকে কমপক্ষে ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে সরিয়ে নেয়া হয়েছে কি না তা তদন্ত করছে নতুন সরকার।

মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি যুক্তরাজ্যের সাহায্য চেয়েছেন। কারণ যুক্তরাজ্য সেই বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যেখানে স্বৈরাচারী সরকারের সদস্যরা তাদের সম্পদ সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে বলে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, এ ধরনের সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও পাচার হয়ে থাকতে পারে। গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার এ বিষয়ে খুব সহায়ক। (ব্রিটিশ) হাইকমিশনার আমার অফিসে এসেছেন এবং তারা প্রচুর প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছেন।

মনসুর বলেন, বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর যুক্তরাজ্যে মালিকানাধীন ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তির পেছনে ব্যবহৃত তহবিলের উৎস শনাক্ত করতে চায় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, সম্পদের তদন্ত করার মাধ্যমে এই সম্পদগুলো কীভাবে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে তার জন্য আমরা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে সাহায্য চাইব।

এছাড়া যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা একটি বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন, তবে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশের সুশীল সমাজের পাশাপাশি বিভিন্ন গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। যদিও বাংলাদেশের কঠোর মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতি রয়েছে যার অধীনে নাগরিকরা প্রতি বছর মাত্র কয়েক হাজার ডলার বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অজান্তে এতো ব্যাপক আকারের চুরি সংঘটিত হতে পারে না। তবে এই বিষয়ে হওয়া তদন্তগুলো এখনো ‘বেশ প্রাথমিক পর্যায়ে’ রয়েছে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা গত মাসে ভারতে পালিয়ে যান। কিন্তু ওই দেশে তার অবস্থান ঠিক কোথায় তা অজানা এবং এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, (বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসা) এই অভিযোগগুলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারের নতুন লেবার সরকারের জন্য জটিল সমস্যাপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

কারণ ব্রিটেনের নতুন এই লেবার সরকারের সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক হচ্ছেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি। টিউলিপ সিদ্দিক এই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। আবার এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের জবাবও দেননি টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে ব্রিটেনের সাহায্যের জন্য ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সাথে দেখা করেছেন। ড. ইউনূসের প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশ থেকে চুরি করা এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করতে যাচ্ছে। এটি এই সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি।’

১৭ কোটি মানুষের দেশ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশে শেখ হাসিনা দুই দশক ধরে ক্ষমতায় ছিলেন। ভোট কারচুপি, অধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তার সরকার অভিযুক্ত ছিল এবং সর্বশেষ গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তার সরকারের পতন হয়। হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের বিষয়টি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এই বছরের শুরুর দিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সাথে যুক্ত কোম্পানিগুলোর মালিকানাধীন ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিওকে ‘অব্যক্ত সম্পদের’ উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করেছিল, যা কর্তৃপক্ষের তদন্ত করা উচিত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশেষ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই রাজনীতিবিদের অবৈধ সম্পদের বিশাল সাম্রাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য। যুক্তরাজ্যে কোম্পানি হাউজের কর্পোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ব্লুমবার্গ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিল। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে পুননির্বাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। তবে সংসদীয় জমি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতির পদে ছিলেন তিনি।

ব্লুমবার্গের সেই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে তার মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তির রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। ভূমি রেজিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, এসব সম্পত্তি ২০১৬ সাল থেকে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কেনা হয়েছে। এর মধ্যে সেন্ট্রাল লন্ডনের ফিটজরোভিয়ার এমারসন বেইনব্রিজ হাউজ, ইস্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে ৬১টি সম্পত্তি এবং ব্রিস্টলের একটি কো-অপ সুপারমার্কেটের সাইটও রয়েছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি বলেন, তার মক্কেলের ‘লুকানোর কিছু নেই’ এবং তিনি কিছু চুরি করেছেন বলে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী একজন চতুর্থ প্রজন্মের ব্যবসায়ী, যিনি রাজনীতিতে আসার আগেই ১৯৯০-এর দশকে তার সম্পদ অর্জন শুরু করেন।

সাবেক এই মন্ত্রী চলতি বছরের শুরুর দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বিদেশে থাকা তার এসব সম্পদ এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড থেকে।

এছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত বলেছেন, তদন্ত হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার সহযোগীদের বিষয়ে তথ্য পরিষ্কার হবে। তিনি দাবি করেন, ‘(নতুন সরকার) সবকিছুই বিশাল দুর্নীতি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে; এবং তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে।’

অন্যদিকে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, নিজেদের দীর্ঘস্থায়ী নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্পদের তথ্য তদন্তে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্ট মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান।

তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে এবং এরপরই লন্ডনকে ঢাকার পক্ষ থেকে এই অনুরোধ জানানো হয়। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের তদন্তে সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্যের সাথে যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশ।

মূলত ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী সরকারের সদস্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরকদমে নেমেছে বাংলাদেশের নতুন সরকার। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান মনসুর বলেছেন, হাসিনার শাসনামল ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকে কমপক্ষে ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে সরিয়ে নেয়া হয়েছে কি না তা তদন্ত করছে নতুন সরকার। মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি যুক্তরাজ্যের সাহায্য চেয়েছেন। কারণ যুক্তরাজ্য সেই বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যেখানে স্বৈরাচারী সরকারের সদস্যরা তাদের সম্পদ সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে বলে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে।

তিনি বলেন, এ ধরনের সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও পাচার হয়ে থাকতে পারে। গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার এ বিষয়ে খুব সহায়ক। (ব্রিটিশ) হাইকমিশনার আমার অফিসে এসেছেন এবং তারা প্রচুর প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছেন।

মনসুর বলেন, বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর যুক্তরাজ্যে মালিকানাধীন ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তির পেছনে ব্যবহৃত তহবিলের উৎস শনাক্ত করতে চায় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, সম্পদের তদন্ত করার মাধ্যমে এই সম্পদগুলো কীভাবে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে তার জন্য আমরা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে সাহায্য চাইব। এছাড়া যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা একটি বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন, তবে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশের সুশীল সমাজের পাশাপাশি বিভিন্ন গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। যদিও বাংলাদেশের কঠোর মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতি রয়েছে যার অধীনে নাগরিকরা প্রতি বছর মাত্র কয়েক হাজার ডলার বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান।

গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অজান্তে এতো ব্যাপক আকারের চুরি সংঘটিত হতে পারে না। তবে এই বিষয়ে হওয়া তদন্তগুলো এখনো ‘বেশ প্রাথমিক পর্যায়ে’ রয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা গত মাসে ভারতে পালিয়ে যান। কিন্তু ওই দেশে তার অবস্থান ঠিক কোথায় তা অজানা এবং এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, (বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসা) এই অভিযোগগুলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারের নতুন লেবার সরকারের জন্য জটিল সমস্যাপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে ব্রিটেনের সাহায্যের জন্য ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সাথে দেখা করেছেন। ড. ইউনূসের প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশ থেকে চুরি করা এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করতে যাচ্ছে। এটি এই সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি।’ ১৭ কোটি মানুষের দেশ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশে শেখ হাসিনা দুই দশক ধরে ক্ষমতায় ছিলেন। ভোট কারচুপি, অধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তার সরকার অভিযুক্ত ছিল এবং সর্বশেষ গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তার সরকারের পতন হয়।

হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের বিষয়টি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এই বছরের শুরুর দিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সাথে যুক্ত কোম্পানিগুলোর মালিকানাধীন ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিওকে ‘অব্যক্ত সম্পদের’ উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করেছিল, যা কর্তৃপক্ষের তদন্ত করা উচিত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশেষ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই রাজনীতিবিদের অবৈধ সম্পদের বিশাল সাম্রাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য।

যুক্তরাজ্যে কোম্পানি হাউজের কর্পোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ব্লুমবার্গ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিল। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। তবে সংসদীয় জমি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতির পদে ছিলেন তিনি। ব্লুমবার্গের সেই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে তার মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তির রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।

ভূমি রেজিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, এসব সম্পত্তি ২০১৬ সাল থেকে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কেনা হয়েছে। এর মধ্যে সেন্ট্রাল লন্ডনের ফিটজরোভিয়ার এমারসন বেইনব্রিজ হাউজ, ইস্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে ৬১টি সম্পত্তি এবং ব্রিস্টলের একটি কো-অপ সুপারমার্কেটের সাইটও রয়েছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি বলেন, তার মক্কেলের ‘লুকানোর কিছু নেই’ এবং তিনি কিছু চুরি করেছেন বলে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী একজন চতুর্থ প্রজন্মের ব্যবসায়ী, যিনি রাজনীতিতে আসার আগেই ১৯৯০-এর দশকে তার সম্পদ অর্জন শুরু করেন। সাবেক এই মন্ত্রী চলতি বছরের শুরুর দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বিদেশে থাকা তার এসব সম্পদ এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড থেকে।