প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে প্রথম একনেক সভা

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতনের পর গতকাল প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিগত সময়ে অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সব প্রকল্প বাদ দেয়া হয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলো কোন পর্যায়ে রয়েছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়া আগামীতে প্রকল্প বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হলেও এবার সেটি পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমবারের মতো তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জানা গেছে, গতকাল বুধবার প্রথম একনেক সভায় চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯৬৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫৮ কোটি ১৬ লাখ পাওয়া যাবে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুটি সংশোধিত এবং দুটি নতুন প্রকল্প। একনেকে অনুমোদিত চারটি প্রকল্প হচ্ছে- শিল্প ও শক্তি বিভাগের ‘বাখরাবাদণ্ডমেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’, ‘দুটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং দুটি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দরপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্প’, আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ‘মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ তথ্য আপা নামক প্রকল্প এবং কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প।

গতকাল একনেক বৈঠক শেষে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিগত সময়ে একনেক সভায় বিপুল সংখ্যক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি এক থাকতো না। অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকতো। বিগত সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সব প্রকল্প বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বড় প্রকল্পগুলোতে সময় কেন বাড়ানো হলো এবং আন্তর্জাতিক মানদ-ের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলো সেগুলো যাচাই করা হবে। বর্তমান সরকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে চায়।

তিনি বলেন, চলমান প্রকল্পগুলো কোন পর্যায়ে রয়েছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগের মতো একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে। তবে বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে, এগুলোতে বিদেশি সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে। অনিয়ম করা যায় না। তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিলে এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আপাতত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে। কারণ, বিগত সরকার কখনোই এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করেনি। কাজেই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এই মুহূর্তে দরকার নেই। নতুন করে রাজনৈতিক সরকার এলে তারা নতুন করে পরিকল্পনা করবে।

তিনি বলেন, নিজেদের জন্য গ্যাসকূপ খনন না করে কেন বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা বোধগম্য নয়। যেসব কূপ উন্নয়ন বা খননের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাও দেয়া হয়েছে বিদেশি কোম্পানিকে। এসব ক্ষেত্রে কতটা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিজেদের গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতে এলএনজি আমদানি ভ্রান্ত নীতি। এতদিন যে অর্থনীতি চালিয়ে এসেছি এলডিসি উত্তোরণের পর দ্বিপাক্ষীক চুক্তি করতে হবে। শিক্ষা প্রযুক্তিতে আরো প্রকল্প নিতে হবে। মানবসম্পদে অনেক পিছিয়ে আছি আমরা।

প্রকল্পতে দাতাগোষ্ঠী হাত খুলে টাকা দিতে চাচ্ছে এমন মন্তব্য করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ইউএসএইড বলছে, তোমরা প্রকল্প তৈরি করো আমরা টাকা দেবো। যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল কিন্তু টাকা নেয়া হয়নি এসব টাকা বাজেট সহায়তা দিতে চায় বিশ্বব্যাংক। সব দাতাগোষ্ঠী আমাদের নতুন চাহিদা জানতে চেয়েছে। কিছু প্রকল্পে ত্বরান্বিত হবে যা বৈদেশিক সাহায্যের প্রকল্প। অনেক প্রকল্প হিমাগারে আছে, মৃত প্রকল্পে ছাড় করে দেবে বিশ্বব্যাংক।