ঢাকা ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল

হিন্দু সম্প্রদায় আমাদের আমানত, তাদের রক্ষা করতে হবে

হিন্দু সম্প্রদায় আমাদের আমানত, তাদের রক্ষা করতে হবে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা আমাদের আমানত। তাদের রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের বর্ণনা তুলে ধরে তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমানতের যে খেয়ানত করে তিনি মুমিন না’। এ আমানতকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। সামনে পূজা আসছে, পূজাকে কেন্দ্র করে কোথাও যেন অঘটন না ঘটে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

গতকাল দুপু?রে ঠাকুরগাঁওয়ের হ?রিপুর উপ?জেলা ঈদগাহ মা?ঠে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বিএন?পির মহাস?চিব ব?লেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভয়াবহ দানব ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। তার পত?নের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার খুন করেছে প্রায় দুই হাজার মানুষকে। কারো হাত চলে গেছে, কারো পা চলে গেছে, কারো মাথার খুলি উড়ে গেছে। এরা কেউ কলেজে পড়ত, কেউবা ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। এইসব মানুষকে হাসিনা খুন করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা মুক্ত বাংলাদেশে বাস করছি। কিন্তু মনে রাখবেন, সেদিন পর্যন্ত এটি মুক্ত থাকবে, যেদিন পর্যন্ত আমরা এটিকে স্বাধীনভা?বে রাখতে পারব। আমরা যদি আবার আওয়ামী লীগের মতো শুরু করি তাহলে কি আমরা টিকতে পারব? উপস্থিত নেতাকর্মীরা না সূচক কথা বললে ফখরুল বলেন, তাদের মতো (আওয়ামী লী?গের) একই আচরণ করলে একই রকম দশা হবে আমাদেরও। সেই জন্য আমরা যারা লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি- তাদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা নিজেদের মানুষের কাছে প্রিয় বানান, ভালোবাসার পাত্র হিসেবে তৈরি করেন। কারও ওপর অন্যায়-অত্যাচার নির্যাতন করবেন না।

বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, গত ১৫-১৬ বছরে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনা আমাদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্যাতন ও জেল-জুলুম করেছে। আপনাদের এইখানে মামলা হয়েছে শুধু বিএনপি করার অপরাধে, জামায়াত করার অপরাধে, আপনাদের জেলে রাখা হয়েছে। সেই অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। যে শেখ হাসিনা সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হয়ে গিয়েছিল, তাকে ঠিক সেভাবে পালিয়ে যেতে হয়েছে। জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে। চলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে লাখ লাখ মানুষ গণভবন দখলে আসছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে হেলিকপ্টারে করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে তিনি জীবন রক্ষা করেন।

পবিত্র কোরআনের সূরা ইমরানের একটি আয়াত আরবিতে তেলওয়াত করে তা বাংলায় অনুবাদ করে ফখরুল বলেন, আল্লাহ বলেন, ‘আমি যাকে ইচ্ছা মালিক বানাই, বাদশা বানাই, রাষ্ট্রপতি বানাই প্রধানমন্ত্রী বানাই- আবার তাকে যেকোনো সময় রাস্তার ফকির বানিয়ে দিই।’ আজকে সেই প্রতাপশালী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়ে সেই করুণ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। আর যারা এইখানে দাপটের সঙ্গে আমাদের শাসন করত, আমাদের জেলে দিত, জুলুম করত, জমি দখল ক?রে নিত, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে নিত, আমাদের রাজনীতি করতে দিত না- আজ তারা জেলের ভেতরে ঢুকে পড়ে আছে। এ জন?্যই আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সীমালঙ্ঘন করো না, সীমালঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না’।

ফখরুল ব?লেন, আমি ১১ বার কারাগারে গিয়েছি। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বছরের পর বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছি। আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে অসংখ্য ছেলেকে গুলি করেছে, অসংখ্য মামলা হয়েছে। বারবার জেলে গিয়েছে আমাদের ছেলেরা; কিন্তু কখনো সত্যের পথ থেকে সরে দাঁড়ায়নি।

ওবায়দুল কাদের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, কোথায় গেলেন ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনি কোথায় চলে গেছেন দেশবাসী জানে না। আমি আপনাকে বলতে চাই, আমার বাসায় আসেন আমার এলাকাতে আসেন। ফখরুল ব?লেন, প্রয়াত জামায়াত নেতা আমাদের গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে আট বছর আয়নাঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে এই আয়নাঘরে রাখা হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীর খবরই পাই না। ১২ বছর আগে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন, এখন পর্যন্ত তার কোনো খবরই পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী-সন্তানরা জানে না তার মৃত্যু দিবস পালন করবে, না আল্লাহ তাকে ভালোভাবে ফিরিয়ে দিক সে দোয়া কর?বে, তারা সেটাও জানে না।

আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সমস্ত নামিদামি মানুষকে টর্চার করার জন্য আয়নাঘর বা?নি?য়েছিল। বিএনপি-জামায়াত ইসলামের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে সেখানে নির্যাতন করা হতো। এদিন নিজে অসুস্থতা থাকার কারণে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে না পারায় নেতাকর্মীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে সভা শেষ করেন মির্জা ফখরুল। সভায় হ?রিপুর উপ?জেলা বিএনপির সভাপতি উপাধ?্যক্ষ জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, আবু তা?হের প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত