ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা মির্জা ফখরুলের

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা মির্জা ফখরুলের

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সবাই অত্যন্ত আশাবাদী, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকল জঞ্জালকে দূর করে দেশে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে যে পরিবেশে সুষ্ঠু ও সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণের একটা পার্লামেন্ট তৈরি হবে। সংস্কার আমরা চাই। মানুষের ওপর যাতে অন্যায়-অত্যাচার না হয়, সে অবস্থায় দেখতে চাই। এখানে আর যেন শিশুদের ওপর গুলি করে হত্যা করা না হয়। যে কাজগুলো একটি সুন্দর সন্ত্রাসবিহীন ভবিষ্যৎ জন্ম নেয়। আমি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের তালিকা তৈরি করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের আধুনিক ভিআইপি হলরুমে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত পরিবারের সদস্য ও আহতদের সাথে সাক্ষাৎ ও সাহায্যকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

আন্দোলনে নিহত ও আহতদের কথা বলতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বিষয়টি আমার কাছে খুবই হৃদয়বিদারক। আজকে এ অনুষ্ঠানে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে একটি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে আহত হয়েছেন। অনেক বাবা এসেছেন যারা তাদের সন্তানদের হারিয়েছেন। তারা জানে না- তাদের ছেলে কি কারণে শহীদ হয়েছেন। এখানে অনেকেই আছেন যাদের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। কারও পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এই স্বাধীন দেশে আমাদের এ বিষয়টি দেখতে হয়েছে। আজকে ২৪ সালে আমাদেরই দেশে নিজেদের দেশের বিশেষ দলের সাথে ফ্যাসিস্ট এর বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমার মতে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে মানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে না। আমাদের মতে তখনই এ ক্ষমতা দেওয়া দরকার যখন মনে হবে সংবিধানে নিয়মের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু এ সংবিধান এখনও ভালো আছে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন সেখানে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে মানে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করা। সে কারণে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করব, এ বিষয়টি তারা পুনঃবিবেচনা করবেন এবং কখনই তারা এমন কোনো ব্যবস্থা নেবেন না, যাতে করে রাজনৈতিক বা সমগ্র দেশের মানুষের অকল্যাণ বয়ে আনে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটি রাজনৈতিক দল। আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এখন নাই। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায়। তারা চেষ্টা করছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্ত বিষয়গুলোর বিচার করতে। এ অপরাধের যিনি মূল হোতা শেখ হাসিনা, যার নির্দেশে হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। ২০১২ সাল থেকে এ জাতীয় হত্যাকাণ্ডগুলো শুরু হয়েছে। আমরা প্রায় ১৫ বছর ধরে এ অবস্থার মোকাবিলা করছি। আমাদের দলের প্রায় ৭০০-এর বেশি মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। হাজার-হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এখানে যারা বসে আছেন কেউ বাদ নেই যাদের নামে ৮-১০টি মামলা হয়নি। আমি ১১ বার জেলে গেছি। আমাদের দলের সভানেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজাপ্রাপ্ত করিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

শেখ হাসিনার শাসনামল নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কতজনকে ব্যবসা হারাতে হয়েছে, জমি হারাতে হয়েছে। চাকরি হারাতে হয়ে তার হিসাব নেই। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়গুলোর উপলব্ধি করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। এটি আমি স্পষ্ট করে বলছি, এটা আমার দায়িত্ব। আমরা ১৫-১৬ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করছি, মার খেয়েছি কারণ ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে সরিয়ে দেয়ার জন্য।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র মির্জা ফয়সল আমীন, সহ-সভাপতি আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, অর্থবিষয়ক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবু নুরসহ জেলা বিএনপি ও এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ এবং নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যরা।

জেলা বিএনপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত পরিবারের সদস্য ও আহতদের মাঝে ১৫ লাখ টাকার সাহায্য তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত