ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর চাপ

বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা
হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর চাপ

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। শুধুমাত্র এ মাসেই এখন পর্যন্ত ৩৬ জন মারা গেছেন। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে এখনই ডেঙ্গু রোগীর উপচে পড়া ভিড়। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত কয়েক মাসের তুলনায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর ৫৫ শতাংশই ঢাকার বাইরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে সে বিষয়ে আরো দুই মাস আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এখনো যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে, অক্টোবরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবছরই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্টদের দায়ী করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা এর দায়িত্বে রয়েছেন তারা এটাকে চাকরি হিসেবে দেখছে, সেবা ও ভালোবাসার আন্তরিকতাপূর্ণ সহাবস্থানের অনুপস্থিতিও ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। একইসঙ্গে রোগীর অসচেতনতা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীর যথাযথ চিকিৎসা না করেই অন্য হাসপাতালে রেফার করা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের দুর্বলতা প্রতিবছরই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গুর ভয়াবহ রূপ শক সিনড্রোম নিয়ে বেশিরভাগ রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, তাহলে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুই সিটি করপোরেশন কী পদক্ষেপ নিয়েছে? গত বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মাথায় রেখে এ বছর যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা পরিস্থিতি সামলাতে আসলে কতটুকু ফলপ্রসূ হবে?

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৬৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১২২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চিকিৎসাধীন হলেও সম্প্রতি উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

ঢাকার হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে শতাধিক রোগী বেড়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে ১৩১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। অর্থাৎ দৈনিক ১৮-২০ জন রোগী আসছেন। ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন আছে পাঁচটি হাসপাতালে। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ও ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল।

এছাড়া মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯৮ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৮৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন। ডেঙ্গু চিকিৎসায় আলাদা বেড আছে ঢাকার এমন ১৮টি সরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন মোট রোগীর সংখ্যা ৮৫২। ঢাকার বাইরেও বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী। ঢাকার বাইরে এক সপ্তাহ আগে ৬১৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও বর্তমানে আছেন ১ হাজার ১৮ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজারে। সেখানে গত ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৪৮৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক এবং নার্সরা। হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে মেঝেতেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়ায় ওয়ার্ডের বাইরেও অতিরিক্ত বেড বসিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, জুলাই-অক্টোবর ডেঙ্গুর মৌসুম। সময়ের সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। গতকাল মুগদা হাসপাতালে ১০১ জন রোগী ভর্তি ছিল। তাদের মধ্যে ২৯ জন শিশু। মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম কম থাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। যার ফলে ডেঙ্গুরোগী বাড়ছে। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম হাসিবুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মৌসুমে যেমন রোগী বাড়ে তেমনই বাড়ছে। তবে রোগীদের শারীরিক জটিলতা বেশি হচ্ছে। সাধারণত ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ- জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা। এবার আমরা দেখছি পেটের সমস্যা হচ্ছে, লিভারে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, এই মুহূর্তে শয্যার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ১০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর আগে সাধারণত ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থাকত- ৩০ থেকে ৩৫ জন, কিন্তু এখন ৬০ থেকে ৭০। যেখানে ডেঙ্গুরোগীদের জন্য শয্যা আছে মাত্র ২০টি।

বর্তমানে সেখানে ১৩৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবু জাফরের ভাই মিলন জানান, শুরুতে ভাইয়ার টানা কয়েক দিন জ্বর ছিল। রক্ত পরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। তার প্লাটিলেট ছিল এক লাখের বেশি। বাসায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ শরীরের অবস্থা খারাপ হতে থাকে, তাই মেডিকেলে নিয়ে আসি। এখন আগের তুলনায় বেশ ভালো আছে। হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ওয়ার্ডের ভর্তি থাকা রোগীর চেয়ে দ্বিগুণ রোগী মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, আমাদের এখানে পুরুষের চেয়ে নারী ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিনই ২০-৩০ জন নতুন রোগী আসছেন। তাই শয্যার চেয়েও রোগীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যেই আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত