ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউনূসের সঙ্গে মোদি বৈঠকে অনাগ্রহীর কারণ

ইউনূসের সঙ্গে মোদি বৈঠকে অনাগ্রহীর কারণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বে এসে পাশ্বর্বর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের সাইডলাইনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে আনুষ্ঠানিক আলোচনার অনুরোধ করে ঢাকা। গত ৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

তবে কূটনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুসম্পর্ক থাকায় বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের স্বার্থ বিলিয়ে দিয়ে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এতে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদি। আর এই অস্বস্তির কারণে নরেন্দ্র মোদি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে আগ্রহ দেখাননি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের ব্যাপারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পদ্ধতি মেনে অনুরোধ করেছে ঢাকা। আলাদা করে বিশেষ কিছু নয়। তার ভাষ্য হলো, ঢাকা অনুরোধ করেছে, ভারত যদি চায় বৈঠক হবে। আর যদি না চায়, এতে জোরাজুরির কিছু নেই।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর হিন্দুস্তান টাইমসের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের সাইডলাইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। কারণ নিউইয়র্কে মোদির তিন দিনের সফর তালিকায় ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের এজেন্ডা রাখা হয়নি।

ভারতের জাতীয় নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলেও স্বস্তিতে ছিল না বিজেপি। এরমধ্যে লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী যুক্তরাষ্ট্র সফরে এক আলোচনায় ভারত যে বহুত্ববাদী ভাষা, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির দেশ সেটা তুলে ধরেন রাহুল। বর্তমানে ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপির অবস্থান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, একথা প্রচার করেন তিনি। পশ্চিমামহলও বিজেপির কট্টরবাদী চিন্তার সমালোচক। সব মিলে বিগত দুই মেয়াদের তুলনায় এবার মোদি কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছেন।

১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ১৪০ কোটি ভারতীয় বাংলাদেশি হিন্দুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভারত যদি একান্তই উদ্বেগে থাকতো, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে পারতেন মোদি। কিন্তু মোদি সেদিকে আগ্রহ না দেখিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে প্রতিবেশি ভারতের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এখন ঢাকার। কারণ শেখ হাসিনার পতনের পর, দুদেশের সম্পর্কে অবনতিতে প্রভাব পড়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে তা দূর করতে ইউনূস-মোদির বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল ঢাকা। কিন্তু এটা স্পর্শ করেনি দিল্লি।

পিটিআইয়ের সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) চেতনার পুনরুজ্জীবন হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছিলেন ড. ইউনূস। ইউনূস বলেছেন, দীর্ঘদিন সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়নি। আমরা যদি একত্র হতে পারি, তবে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। তিনি আরো বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে ইউরোপের দেশগুলো অনেক কিছু অর্জন করেছে। সার্কের কাজ করার বিষয়টি আমাদেরও নিশ্চিত করতে হবে। ইউনূসের সার্কের চেতনার পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা খুব একটা পছন্দ করছে না দিল্লি। সার্ক কার্যকর থাকলে আঞ্চলিক বৈঠকগুলোতে অনেক সমস্যা সুরাহা হওয়ার পথ তৈরি হতো। ভারত কোয়াড বা ব্রিকস নিয়ে যত আগ্রহী, সার্ক নিয়ে কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। এছাড়া সার্ক যদি কার্যকর থাকে, এক ফোরামে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসা হবে। এতে বৈরিতা কমে আসার পথ তৈরি হতে পারে। কিন্তু যেখানে পাকিস্তান আছে, সেখানে ভারত সক্রিয় হতে চায় না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে সার্কের মাধ্যমে বিবদমান ইস্যু সুরাহা হোক, এটা দিল্লির মনোভাব নয়। প্রচলিত রাজনীতিতে যারা পুরোনো, তারা কেনো হুট করে নবাগত ইউনূসের উদ্যোগে কেন শামিল হবে। এই ধারণা ভারতের মনে হতে পারে।

ইউনূস সরকার দায়িত্ব নিয়েছেন সংস্কার করতে। তার চিন্তা প্রতিবেশী অনেক দেশের সরকারপ্রধান থেকে আলাদা। সার্ক নিয়ে ইউনূসের সঙ্গে মতের মিল হবে না ভারতের। আঞ্চলিক রাজনীতিতে সার্কের সংস্কার এবং কার্যকারিতা চায় না ভারত। মোদির সঙ্গে বৈঠক হলে সার্ক প্রসঙ্গ তুলতে পারেন ইউনূস। এ আশঙ্কা থাকতে পারে দিল্লির।

স্বল্প সময়ের নোটিশে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। এমনটা বলেছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এরমধ্যে হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ঠিক কোন স্ট্যাটাসে হাসিনা ভারতে বর্তমানে অবস্থান করছেন, তা ঢাকার কাছে অজানা। শুধু তাই নয়, হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার চাপও রয়েছে ড. ইউনূসের সরকারের উপর। যদি ইউনূস-মোদি বৈঠক হয়, এতে হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ আলোচনা ওঠার সম্ভাবনা থাকতই। আপাতত এসব প্রশ্নের জবাব দিতে চায় না দিল্লি। ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার এটাও উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত