ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আভিভাবক ছাড়া ইসি

আভিভাবক ছাড়া ইসি

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) পদত্যাগ করার পর আভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে সাংবিধানকি এ প্রতিষ্ঠানঠি। ফলে ইসি কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ইসি সচিব বিভিন্ন দিকের চাপ একা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন। এমন অবস্থায় সহসা নতুন কমশিন নিয়োগ দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেয়ার জন্য নির্বাচনি সংস্কার কমিশন কাজ করছে। কিছু দিনের মধ্যে ইসি ভবনে তারা আফিস করবেন বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ ছাড়াও ইসির অন্যান্য কাজ এগিয়ে নিতে চায় নির্বাচনি সংস্কার কমিশনের সদস্যরা।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আমরা কাজ করছি। আমরা দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক এটিই চাই। তবে নিরপক্ষে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে একটু সময় দিতে হবে।

আপনি নির্বাচন কমিশনে বসবেন কি না এমন প্রশ্নে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখনো এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন কমিশনের অনেক কাজ থাকে সেগুলো এগিয়ে নিতে চাই।

এর আগে নির্বাচনিব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আরপিও আইন ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হবে। কেননা নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত যে আইন করা হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ইসি গঠন হওয়া উচিত।

বদিউল আলম বলেন, আওয়ামী লীগের সবাই কলঙ্কিত ও পলাতক। তারা বিশেষ সময়ের মধ্যে পুনর্গঠিত হতে না পারলে নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না।

তিনি বলেন, ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন না হলে এবং তারা পুনর্গঠিত হতে না পারলে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে না। যারা ডামি নির্বাচনের আয়োজন করেছে তারা সুস্পষ্টভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী।

বদিউল আলম বলেন, বিগত তিন জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত ১০ লাখ মানুষ সবাই নির্বাচনি অপরাধী, তাদের শাস্তি হওয়া যৌক্তিক। নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রশ্ন তো সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আপনি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান। অন্যদিকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান শাহদীন মালিক। এই দুই কমিশনের মধ্যে সমন্বয় কীভাবে হবে এমন প্রশ্নে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সমন্বয় তো হতেই হবে। কারণ সংবিধান ও নির্বাচন একে অন্যের পরিপূরক। নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন কিছু সংস্কার প্রয়োজন হবে, যার জন্য অবশ্যই সংবিধান সংশোধন করতেই হবে। আমি আশা করছি, আমরা যৌথভাবে কাজ করতে পারব। এখন আমাদের কাছে যদি অংশীজনদের পক্ষ থেকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচনের সুপারিশ আসে, এটি পরিবর্তন করা সম্ভব একমাত্র সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। সংবিধান সংশোধন কমিটির সংস্কার প্রস্তাবে এটি থাকতে হবে। এছাড়া আরো কিছু ক্ষেত্রের পরিবর্তনের প্রশ্ন সামনে আসবে, যেগুলো দুই কমিটির সঙ্গেই সম্পৃক্ত। সুতরাং অবশ্যই সমন্বয় দরকার হবে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেয়ার বিধানটি সংবিধান থেকে বাদ দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ডা. মো. আবদুল আলিম। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকে সেটিও দেখতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ডা. মো. আবদুল আলিম বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২ আন্তর্জাতিক নির্দেশক নীতিমালা অনুসারে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কমিশন নিয়োগের নিশ্চয়তা দেয় না। অন্তর্বর্তী সরকারের দুটি বিকল্প রয়েছে বিদ্যমান আইনটিকে পুনর্লিখন বা একটি নতুন আইন প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইনটি স্থগিত করা। যে বিকল্পই বেছে নেয়া হোক না কেন, আইনটিকে নিশ্চিত করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের বস্ত্র ও পাট ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের অধীনে ইসি নিয়োগ করা হলে তা হবে আরো স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি ও সুশীল সমাজ উভয়ের নিরপেক্ষ নির্দলীয় পেশাজীবীদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে। এ ধরনের সার্চ কমিটিকে অবশ্যই স্বাধীন ও যে কোনো ধরনের প্রভাবমুক্ত হতে হবে।

এদিকে দায়িত্ব নেয়ার আড়াই বছরেই বিদায় নিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গত ৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা। ইসি সচিব শফিউল আজিম পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।

২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। এছাড়া, ইসির সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। তারা নিয়োগের একদিন পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে শপথ নেন।

ওই কমিশনের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনটি বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বর্জন করে। ভোট শেষে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।

বিগত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সরকারের পতনের পর প্রশাসনে থাকা আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এসময় বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিলোপ করে নতুন কমিশন গঠনেরও দাবি ওঠে। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। ইসি সূত্র জানায়, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নিজেদের অবস্থান ও করণীয় জানতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় আউয়াল কমিশন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো ইসির সংস্কার করা হবে বলে নিশ্চিত করছেন তারা। সেজন্য বেশ কয়েকদিন ধরেই তারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা অফিস করলেও তাদের বিদায়ের প্রস্তুতিই প্রাধান্য পায়। শেষ সময়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় জরুরি কাগজপত্রসহ অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে নেন তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত