ড. ইউনূস জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন আজ
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন আজ। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্যদিয়ে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সামনের চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। আর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বের দেড় মাসের মধ্যেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। ভাষণে দেশে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা তুলে ধরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্র মেরামতে অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর পূর্তির বছর। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা, সম্পদের অবৈধ পাচার রোধ, অভিবাসী অধিকার রক্ষার বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গতকাল নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় জাতিসংঘ সচিবালয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। একইদিনে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং কুয়েতের যুবরাজ শেখ সাবাহ খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহ্র সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ড. ইউনূস।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের বীরত্বগাধা তুলে ধরবেন। ছাত্ররা প্রাণের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে কীভাবে সফল অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে এবং মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্নের বীজ বপন করেছে, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে তার প্রতিফলন থাকবে। এছাড়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিজয়ের নতুন যাত্রায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুশাসন এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যেসব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ড. ইউনূসের ভাষণে সেসব তুলে ধরা হবে বলে জানান শফিকুল আলম। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের দর্শন বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন অধ্যাপক ইউনূস। নিজেদের গর্বিত ও মর্যাদাশীল দেশের জনগণ হিসেবে বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ কীভাবে নিজেদের তুলে ধরবে, সেটিই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাবেন প্রধান উপদেষ্টা। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে দেশের ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করে তিনি ভূ-রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে উদাত্তভাবে আহ্বান জানাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বেশ কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেছেন। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি তা গ্রহণ করেন। ৮ আগস্ট তিনি দায়িত্ব নেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ বুধবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় দুপুরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে ড. ইউনূস তার নেয়া সংস্কার কাজের জন্য বিশ্বব্যাংকের আরো সহায়তা চান। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া নানা সংস্কারের পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সংস্কার, ডিজিটালাইজেশন, তারল্য, জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতে সংস্কারের জন্য ৩.৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘদিনের বন্ধু বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ। তিনি বলেন, অন্তত দুই বিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ দেয়া হবে এবং বিদ্যমান ঋণ কর্মসূচি থেকে আরো দেড় বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হবে। বিশ্বব্যাংক ডিজিটালাইজেশন, তারল্য, জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতের সংস্কারে সহায়তা করবে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগদানে প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে নিউইয়র্কের জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।