নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই
* বাজারে সবজির দাম চড়া * স্বস্তি ফেরেনি ডিম-মুরগিতে * হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। এর প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর। উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে তারা জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে, বাড়তি দামের কারণে বিক্রি কমে গেছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। ছোট জালি কুমড়া কিংবা লাউও বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। লাউ ও কচুশাকের আঁটি সর্বনিম্ন ৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সবজির পাশাপাশি স্বস্তি নেই নিত্যপণ্যের বাজারেও। প্রতিদিনের দরকারি পণ্য পেঁয়াজের দাম বেড়ে ঠেকেছে ১২০ টাকায়। আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা করে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, করলা, বেগুন, পটল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢ্যাঁড়স, লাউশাক, পালংশাক, লালশাক, কলমিশাক, কচুশাকসহ সব ধরনের শাক-সবজি সরবরাহ রয়েছে। একইসঙ্গে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, পাতা কপি, শিমও রয়েছে বাজারে। এসব সবজির অধিকাংশই বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০, ৭০ ও ৮০ টাকায়।
বাজারে সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম হাঁকা হচ্ছে- শিম, গাজর, বেগুনের। আকার ও মানভেদে প্রতি কেজির শিমের দাম ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। আর ফুলকপি প্রতি পিস ৬০-৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কেজি প্রতি ঢ্যাঁড়স ৭৫-৮০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, গোল বেগুন আকারভেদে ৮০-১০০ টাকা, মুলা ৭০-৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কাঁচামরিচ কেজি ২৪০ টাকা, দেশি শসা ৮০-৯০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০-৭০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে আরো দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১১৫ টাকা, আদা ৩৫০ টাকা, রসুন ২০০-২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং বন্যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। বৃষ্টি হলে বাজারে সবজি আসে কম। যে কারণে দাম একটু বেশি। তাছাড়া শুক্রবার ছুটির দিন হিসেবে পাইকাররা বাড়তি দাম রাখেন। তারা বলেন, শীতের আগে বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে এখন বাজারে সবজির সরবরাহ কম। তাই দাম একটু বেশি। সরবরাহ বাড়লে হয়তো দাম কমে আসবে।
নিত্যপণ্যের বাজারদর বিশ্লেষণে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত সপ্তাহজুড়ে আটা (প্যাকেট), পাম অয়েল (লুজ), রাইস ব্রান তেল (১ লিটার বোতল), পাম অয়েল সুপার, ডাল (দেশি), ডাল (নেপালী), মুগ ডাল (মান ভেদে), ছোলা (মান ভেদে), পেঁয়াজ (দেশি), রসুন (দেশি), শুকনা মরিচ (আমদানি), হলুদ (আমদানি), আদা (আমদানি), দারুচিনি, এলাচ, ধনে, তেজপাতা, ডানো, চিনি, আয়োডিনযুক্ত লবণের দাম বেড়েছে।
এর বিপরীতে খোলা ও প্যাকেট ময়দা, সয়াবিন তেল (লুজ), সয়াবিন তেল (বোতল), সয়াবিন তেল (বোতল), অ্যাংকর ডাল, পেঁয়াজ (আমদানি), শুকনা মরিচ (দেশি), হলুদ (দেশি), জিরা, ডিপ্লোমা (নিউজিল্যান্ড), ফ্রেশ, মার্কস গুঁড়া দুধের দাম কমেছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে বলেও দাবি করা হয় সংস্থারটির পক্ষ থেকে।
একজন ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সারা বছর জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে নানা অজুহাতে। কখনও বৃষ্টি, কখনও হরতাল-অবরোধ, কখনও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে। এগুলো যে শুধু অজুহাত তা এখন সবাই বুঝে গেছে। তিনি আরো বলেন, আগে গরুর মাংস কিনতে চিন্তা করতে হতো। এখন ডিম কিংবা সবজি কিনতে চিন্তা করতে হচ্ছে। এটাই হচ্ছে গরিব ও মধ্যবিত্তের ভাগ্য। এসব নিয়ে কথা বলেও কোনো লাভ হয় না।
এদিকে, সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পরও স্বস্তি ফেরেনি ডিম ও মুরগির দামে। চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্য দুটি। উল্টো সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ টাকা। সবজির দাম গত সপ্তাহের মতো থাকলেও এখনো দাম চড়া। বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে অথচ গত সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০ টাকা কেজি দরে। মাংসের বাজারে ৭৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে প্রতি কেজি গরুর মাংসের জন্য। মুরগির ডিমের ডজন ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে সবজির দাম স্থিতিশীল আছে।