ঢাকা ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বৈত ভোটার নিয়ে বিপাকে ইসি

প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে ভোটার তালিকা

প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে ভোটার তালিকা

একই ব্যক্তি দুইবার ভোটার (দ্বৈত ভোটার) হওয়ার কারণে বিপাকে পরেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়া জন্য কেউ দুইবার ভোটার হয়েছেন। অনেকে অসৎ উদ্দ্যেশে দুইবার ভোটার হয়েছে। এ কারণে কে কোন উদ্দেশ্যে ভোটার হয়েছে তা যাছাই করতে গিয়ে বিপাকে পরেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্ঠরা জানান, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ইসি সংস্কারের কাজ চলছে। সার্ভারে যদি দ্বৈত ভোটার থাকে তবে ভোটার তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এ কারণে দ্রুত বিষয়টি নিয়ে একটি সমাধানে আসতে হবে। তা না হলে বিতর্ক তৈরি হতে পারে।

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভারে দুটি কারণে ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৩০১ জন ভোটারকে ডিফল্ট হিসেবে চিহ্নিত ইসি। ডিফল্ট ভোটারের মধ্যে দ্বৈত ভোটারে সংখ্যা রয়েছে- ৫ লাখ ৩০ হাজার ২৫৮ জন। এছাড়া ম্যাচ ফাউন্ড (অন্য ভোটার সঙ্গে আঙুলের ছাপ মিলে যাওয়া) এমন ভোটারের সংখ্যা রয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৪৩ টি। এ দুই ক্যাটাগরি ভোটারকে একত্রে ডিফল্ট ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসির কর্মকর্তারা। বিষয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসির এক সমন্বয় সভাতেও আলোচনা হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এক্ষেত্রে এসব নাগরিকদের এনআইডি বহাল রেখে দ্বিতীয়টি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। আর ম্যাচ ফাউন্ডের (অন্য ভোটার সঙ্গে আঙুলের ছাপ মিলে যাওয়া) ক্ষেত্রে ব্যক্তি যদি দ্বিতীয়বার ভোটার না হয়ে থাকেন সে সকল আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা নতুন করে বায়োমেট্রিক গ্রহণ করে তা সমাধান করবে।

দ্বৈত ভোটার বিষয় জানতে চাইলে ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহবুব আলম তালুকদার জানান, দ্বৈত ভোটার হলে সে কোনো না কোনো এক সময় ধরা খাবে। কারণ যেকোনো একটি সুযোগ সুবিধা নিতে হলে তার এনআইডি আমরা কম্পেয়ার করি। আর কম্পেয়ার করতে গেলে ধরা পড়বে তার আরেকটি এনআইডি আছে।

দ্বৈত ভোটার দুইবার ভোট দিতে গেলে আপনাদের ভোটার তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তালিকা তো আমরা এখনো ফাইনাল করিনি। আমরা তালিকা ফাইনাল করতে গেলে আমরা ওই ম্যাকানিজম করব যাতে তারা দুইবার ভোট দিতে না পারে। এছাড়া দ্বৈত ভোটারের ক্ষেত্রে যে সময় আমাদের কাছে রিপোর্ট হয় আমরা ওটা লক করে দেই।

ম্যাচ ফাউন্ড (অন্য ভোটার সঙ্গে আঙুলের ছাপ মিলে যাওয়া) বিষয়ে এনআইডি অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বাড়ি বাড়ি ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় যারা ডাটা এন্ট্রি করেন, তারা বেশি ইনপুট দিলে বেশি টাকা পাবেন- এই সু?বিধার কারণে তাড়াহুড়ো করেন। ইসির নির্দেশনা হচ্ছে আঙুলের ছাপ যেন কমপক্ষে ৬০ শতাংশ নেওয়া হয়।

কিন্তু তাড়াহুড়োর কারণে অনেকেরই ৬০ শতাংশের কম ছাপ নেয়া হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ধরনের নাগরিকের আঙুলের ছাপ অন্যদের সঙ্গে মিলে যায়। ফলে বিভিন্ন সেবা পেতে বিড়ম্বনায় পড়েন তারা। আবার চর্মরোগ, বেশি কাজ করার কারণে অনেকের আঙুলের ছাপ পাওয়া যায় না, তাদেরও একই সমস্যায় পড়তে হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, ম্যাচ ফাউন্ডের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সরাসরি উপস্থিত হয়ে ফের আঙুলের ছাপ দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে এনআইডির সঙ্গে তার আঙুলের ছাপের শতকরা হার বেশি হবে, সেটিই তার এনআইডি হিসেবে প্রমাণিত ধরা হয়।

এনআইডি সেবা নিয়ে ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, এখন আমরা এই সেবাটি শতভাগ নির্ভুল করার চেষ্টা করছি। এজন্য মাঠ কর্মকর্তাদের মনিটরিং করারও সিদ্ধান্তও হয়েছে।

সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার র ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। তবে হালনাগাদ কার্যক্রমের বাইরেও অনেকে ভোটার হয়েছেন। এক্ষেত্রে বর্তমানে প্রকৃত ভোটার সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

এদিকে দেশের আট কোটি ৯ লাখ ২১ হাজার ১৩০ জন মানুষকে উন্নত মানের এনআইডি বা স্মার্টকার্ড সরবরাহ করেছে ইসি।

জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম বলেন, ২০১৬ সালে স্মার্টকার্ডের বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের আট কোটি ৯ লাখ ২১ হাজার ১৩০ জন পেয়েছেন। এখনো বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ ৭৬ হাজার ১৪৭ জনের কার্ড। সবচেয়ে বেশি স্মার্টকার্ড বিতরণ হয়েছে ঢাকায়, ১ কোটি ৫০ লাখ ৩ হাজার ৮৬টি। সবচেয়ে কম বিতরণ হয়েছে সিলেটে ৩৭ লাখ ২১ হাজার ৮৬৬টি।

উদ্বোধনের পর ৮ বছর কেটে গেলেও এখনো ১৪৩ উপজেলার লাখ লাখ ভোটারের উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড ছাপাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ছাপানো হলেও ৪৭টি উপজেলার ৭২ লাখের মতো কার্ড বিতরণ হয়নি।

ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, দেশে মোট উপজেলার (ইসির প্রশাসনিক এলাকা) সংখ্যা ৫১৯টি। এগুলোর মধ্যে বিতরণ শেষ হয়েছে ৩৫০টি উপজেলার স্মার্টকার্ড। বর্তমানে স্মার্ট কার্ড বিতরণ চলমান আছে এমন উপজেলার সংখ্যা ১১টি। স্মার্ট কার্ড মুদ্রিত হয়েছে; কিন্তু বিতরণ শুরু হয়নি এমন উপজেলার সংখ্যা ১৫টি। পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে ডেলিভারির অপেক্ষা রয়েছে এমন উপজেলার সংখ্যা ২১টি। আর স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ করা হয়নি এমন উপজেলার সংখ্যা ১৪৩টি।

জানা গেছে, ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নাগরিকদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১১ সালে আইডিইএ (স্মার্টকার্ড) প্রকল্পটি হাতে নেয় কমিশন। তারপর দীর্ঘ ৪ বছর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে স্মার্টকার্ড তৈরির দিকে এগোয় সংস্থাটি। এক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ওই সময়ের ৯ কোটি ভোটারের জন্য ৯ কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড তৈরি করে দিতে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি করে ইসি। যার মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। কিন্তু মেয়াদ বাড়ানোর পরেও ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তিতে উল্লেখিত কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সে বছরের শেষের দিকে অবার্থারের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবার্থার ১ দশমিক ৫১ ডলার দরে ৭ কোটি ৭৩ লাখ কার্ড সরবরাহ করতে পেরেছিল। সেই মোতাবেক আগের ১ কোটি ২৭ লাখ নাগরিকের কার্ড ঘাটতি ছিল। এই কয় বছরে ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। সব মিলিয়ে আরো প্রায় সাড়ে ৪ কোটির মতো ব্ল্যাংক কার্ড তৈরি এবং তাতে নাগরিকের তথ্য ইনপুট করে বিতরণে যেতে হবে। এজন্য আইডিইএ দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আর ১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে তিন কোটি কার্ড দেয়ার কথা থাকলেও ডলারের দাম বাড়ায় ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০টি কার্ড দেবে বিএমটিএফ। অবশিষ্ট কার্ডগুলো প্রকল্পের মেয়াদ শেষে রাজস্ব খাত থেকে ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত