সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা গণনার ফলাফল ঘোষণা ৮ অক্টোবর

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

সুন্দরবনের বাঘ গণনার ফলাফল ঘোষণা করা হবে আগামী ৮ অক্টোবর। ১ হাজার ২০০টি ক্যামেরায় গত মার্চে বাঘ গণনার কাজ শেষ হয়। তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে গত ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে ফলাফল ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু যাচাই কাজে সময় লাগায় বিলম্ব হয়। ২০১৮ সালে সর্বশেষ গণনায় ১১৪টি বাঘ ছিল। এর আগে ২০১৫ সালের গণনায় ছিল ১০৬টি বাঘ। তৃতীয়বারের মতো সুন্দরবনের বাঘ গণনা শুরু করেছিল ২০২৩ সালে। ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এ বাঘ গণনা হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। বাঘ যে আমাদের রক্ষাকবচ তা সাধারণ মানুষ বুঝেছে। এ জন্য বাঘ দেখলে এখন আর মানুষ পিটিয়ে মারে না। এ কারণেই বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন বেস্ট-এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘বাঘ প্রকৃতির রক্ষাকবচ। সুন্দরবনসহ প্রকৃতিকে রক্ষা করছে বাঘ। এই সচেতনতার কারণেই প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বাঘের সংখ্যা।

প্রতি ৩ বছর অন্তর অন্তর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাঘ গণনা না করে এই টাকা দিয়ে উপকূলীয় মানুষের উন্নয়নে কাজ করলে সচেতনতা আরো বাড়তে পারে।’ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য ও বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর বাঘ গণনার জন্য কোটি কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এখানে বড় ধরনের অর্থ অপচয় হচ্ছে। জরিপের নামে, বাঘ গণনার নামে অর্থ লুটপাট হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবন বাঁচাতে ১০ বছর পর পর একবার গণনা করলে সুন্দরবনের ওপর চাপ কমবে।’ সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘এর আগে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাঘ জরিপ হয়। কিন্তু এ বছর দেশীয় প্রযুক্তি ও দেশের অর্থায়নে খুলনার চারটি রেঞ্জেই ক্যামেরার ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে এই জরিপ করা হয়।’ ২০১৫ এবং ২০১৮ সালের তুলনায় এ বছর বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করছেন। এ ছাড়া ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঘকে রক্ষা করার জন্য বাঘের কেল্লা নির্মাণ করা হচ্ছে সুন্দরবনে। বন বিভাগের তথ্যে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বভিাগ।

১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান। ২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয় ৪৪০টি। ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়। ২০১৫ সালের প্রথম ক্যামেরা ট্রাপিং জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৬টি। ২০১৮ সালের দ্বিতীয় ক্যামেরা ট্রাপিং হয়। এ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি পাওয়া যায়। সুন্দরবন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে ১০টি। ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা। একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে। বাকি ২৫ বাঘ হত্যা করেছে চোরাশিকারিরা।