টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে নেত্রকোণার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও পূর্বধলায় বণ্যা-পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কংস নদের পানি এরই মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। সোমেশ্বরি ও উপদাখালি প্রভৃতি নদ-নদির পানিও বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গতকাল রোববার দুপুর দুইটায় কংসনদের পানি জারিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে দুর্গাপুর পয়েন্টে সোমেশ্বরি নদির পানি বিপদসীমার ৪২ ও কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা যায়। এদিকে, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও নেত্রকোণা সদরের নিম্ন এলাকার অন্তত ৫০ গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানির নিচে। জেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে এ পর্যন্ত দুর্গাপুরের ৬২টি, কলমাকান্দায় ৯৩টি, পূর্বধলায় ১১টি ও সদরের ২০টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পানির চাপে প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে পূর্বধলা উপজেলার নাটেরকোণা বেড়িবাঁধ। ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধের বিভিন্ন স্থানের উপর দিয়ে পানি গড়াচ্ছে। পানিতে ছুঁইছুঁই করছে অধিকাংশ এলাকা। বস্তা ও মাটি ফেলে এই বাঁধটিকে কোনো রকমে টিকিয়ে রাখার চেষ্ঠা করছেন স্থানীয়রা। অনেকেই বলেন, বাঁধটি ভেঙে গেলে সমস্ত পুর্বধ্বলাই বন্যাক্রান্ত হতে পারে।
আকস্মিক বন্যার কারণে উপজেলার অন্তত ১৮ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। পুকুরের পাড় ডুবে অসংখ্য পুকুরের মাছ, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শত শত একর শাক-সবজির খেত। শ্যামগঞ্জ-জারিয়া রেললাইনের বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। নাটেরকোণা বেড়িবাঁধের ১২টি পয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ মেরামতে পাউবো ও প্রশাসনের লোকজনসহ কাজ করছেন স্থানীয়রা।
দুর্গাপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে কুল্লাগড়া, গাওকান্দিয়া ও কাকৈরগড়া ইউনিয়নের সব গ্রামের মানুষজন চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। বিশেষ করে দরিদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির অনেকের ঘর-বাড়ি ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় সমাজ সেবক অন্তর হাজং বলেন, ওইসব পরিবারের অনেকের ঘরই মাটির তৈরি। বৃষ্ঠির পানিতে মাটির দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। তাদের বসবাসের বিকল্প জায়তা নেই। এই উপজেলার ৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ মোট ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
দুর্গাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম তলিয়ে গেছে।
কলমাকান্দা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তা এখনো সব বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
এই দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টার পর থেকে আজ রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার জারিয়া-ঝাঞ্জাইল স্টেশনে ৩০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বশেষ ৭২ ঘণ্টায় (৩ দিনে) এই স্টেশনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭৫৮ (২০০ + ২৫০ + ৩০৮) মিলিমিটার। বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশের অভ্যন্তরে ৩ দিনে ৭৫৮ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টিপাত সম্ভবত আর কোনো জেলায় হয়নি।
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও পুর্বধ্বলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। এদিকে বন্যা-পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক বনানি বিশ্বাস জানান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা ও শুকনো খাবার রেডি রাখাসহ সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। এরই মধ্যে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় একহাজার ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে।