ঢাকা ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তারেক রহমানের মামলাগুলো বানোয়াট ও ভিত্তিহীন

মামলাগুলো আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে

বললেন কায়সার কামাল
মামলাগুলো আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তার বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ছয়টির বিচার শেষে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। আর কিছু মামলা স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। তবে, লন্ডনে থাকা তারেক রহমান কোনো মামলাতেই সাজা ভোগ করেননি। আদালত তাকে পলাতক হিসেবে দেখিয়ে এসব রায় দেয়। তবে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে।

গতকাল রোববার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, তার প্রত্যেকটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মামলাগুলো আমরা মোকাবিলা করবো। কারণ, আইন-আদালত ও সংবিধানের প্রতি তারেক রহমান সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। তারেক রহমান দেশের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয়’ নেতা এবং তিনি যথাসময়ে দেশে ফিরবেন।

হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচাপতির বিরুদ্ধে ‘দলকানা’ হওয়ার অভিযোগ তুলে তাদের অপসারণের দাবি তুলছে বিএনপি। গত শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছিলেন, তারা বৈঠকে ‘দলকানা’ ৩০ জন বিচারপতির অপসারণ চেয়েছেন। এ ব্যাপারে কায়সার কামাল বলেন, রাজনীতিকরণ করার অভিযোগ থাকা হাইকোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানিয়ে এসেছে বিএনপি। আমরা আইনজীবী হিসেবে আইন অঙ্গনের মানুষ হিসেবে এই দাবির সঙ্গে একমত।

বিচার বিভাগ কোনো দলের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেসব বিচারপতি কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আশা করি, কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের দাবি, রাজনৈতিকভাবে এসব মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৭টি মামলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থপাচার মামলা ও সারাদেশব্যাপী মানহানির মামলাসহ আরও অন্তত বিশটির বেশি মামলা হয় বলে জানান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশ চলার সময় গ্রেনেড হামলা হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় অন্তত ৪০০ নেতাকর্মী আহত হন। ২০১৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ মামলায় রায় দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। ৫২ জন আসামির মধ্যে তিনজনের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় বাকি ৪৯ জনের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়। এ মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। তারেক রহমানকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা : ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলায় অভিযোগ ছিল, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ ট্রাস্টের কাজে ব্যবহার করা হয়নি। বরং সেই টাকা নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হাইকোর্ট পরে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।

এই মামলায় খালেদা জিয়া ২ বছর কারাভোগ করেন। ২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এ মামলায় তারেক রহমানকে ২০০৮ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়ে লন্ডন চলে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত