বছরের শুরুতেই নতুন বই পাবে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

নানা চ্যালেঞ্জ ও বৈরি পরিবেশের মধ্যেও বরাবরের মতো এবারো বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছে দিতে কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে পুরোদমে কাজ চলছে। এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কোটি বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন বই মুদ্রণের লক্ষ্যে আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে টেন্ডার উন্মুক্ত করার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। এবার পাঠ্য পুস্তকের গুণগত মানের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরন করা হবে। আনুষঙ্গিক সব প্রক্রিয়া শেষ হলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বই মুদ্রণের কাজ শুরু হবে বলে তারা আশা করছেন। সাধারণ স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য বই মুদ্রণের ব্যবস্থা করে থাকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এনটিসিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, ‘প্রতি বছরই জানুয়ারিতে নতুন বই দেয়ার একটা রেওয়াজ রয়েছে। সেটার ভাল ও মন্দ দু’টি দিকই রয়েছে। কারণ, ওই ধরনের বাধ্যবাধকতার কারণে বইয়ের গুণগত মানের সাথে অনেক ক্ষেত্রে আপোষ করতে হতো। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেঁড়া বই, বইয়ের বাঁধাই ঠিক না থাকা, সেলাই খুলে যাওয়া, নিম্নমানের কাগজ ও ছাপা- এ ধরনের অভিযোগ আসতো। দেখা যেতো সে কারণে তাড়াহুড়ো করে বই বিতরণ করতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে গুণগতমান ঠিক রাখা সম্ভব হতো না।’

তিনি আরো বলেন, এবারের চ্যালেঞ্জটা দু’দিক থেকেই। এক হলো-শিক্ষা উপদেষ্টার নির্দেশনা মোতাবেক ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুযায়ী বইয়ের পরিমার্জন করতে হচ্ছে। অপরটি হলো, বইয়ের গুণগতমান ঠিক রাখা। বইয়ের গুণগতমানের ওপর গুরুত্বারোপ করে কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিতে সবাই কাজ করছে উল্লেখ করে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকেই পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কাজ তদারকি করতে আমাদের একটি টিম কাজ করছে। কভিড-১৯-এর কারণে ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে নভেম্বর মাসে প্রিন্ট অর্ডার দিয়েও জানুয়ারিতে পাঠ্যপুস্তক উৎসব করেছি। সেক্ষেত্রে সবগুলো বই যে আমরা দিতে পেরেছিলাম, তা কিন্তু নয়, তবে মোটামুটি ওই মাসের মধ্যেই সব বই গেছে। এবারো আমরা চেষ্টা করবো শতভাগ না হলেও জানুয়ারির প্রথম দিকে ম্যাক্সিমাম বই দিয়ে দিতে। এটাই আমাদের এখন চ্যালেঞ্জ। বইয়ের কাজ বিভিন্নভাবে হচ্ছে, প্রথম কথা হলো, বই টেন্ডার হয়। টেন্ডার একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। যারা টেন্ডার গ্রহণ করেন, তাদের যে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বই দেওয়ার কথা। সেটা না দিতে পারলে এর জন্য পেনাল্টি হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যে সমস্ত টেন্ডার আমরা শিডিউল করেছি, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব পাঠ্যপুস্তক নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যাবে। টেন্ডারে যারা অংশ নিয়েছেন তারা সে সব শর্ত মেনেই কাজ করছেন।’

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্য পুস্তক) প্রফেসর ড. রিয়াদ চৌধুরী জানান, নতুন বছরে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক বিতরণের জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন টেন্ডারগুলো আপ করা হচ্ছে। আমরা অলরেডি টেন্ডার ওপেন করেছি, এটার প্রক্রিয়া আরো আগেই শুরু হয়েছিল, দুটো অলরেডি হয়ে গেছে। কিছু সময় বাকি আছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই টেন্ডার লাইভে চলে যাবে। কাজ মোটামুটি শেষ করে আনা হয়েছে। কাগজের মিল ও প্রেসে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের অগ্রগতির বিষয়ে ড. রিয়াদ বলেন, ‘উনাদের সাথে এরই মধ্যে আমরা একাধিকবার মিটিং করেছি। মিল কর্তৃপক্ষ বলেছেন, তারা পর্যাপ্ত কাগজ সংগ্রহ করতে পারবেন। আর প্রেসের কথা হচ্ছে কাগজ যদি ঠিক সময়ে পান তাহলে যথাসময়ে তারা মুদ্রণের কাজ করতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে ‘জিরো টলারেন্সে’ নীতিতে আছি। কোয়ালিটি নিশ্চিতে আরেকটি বিষয় আছে তা হলো, পরিদর্শন এজেন্ট কাজ করে। টেন্ডার দিয়ে পরিদর্শন টিম হায়ার করা হয়। তারা কোয়ালিটিটি সঠিকভাবে মেনটেইন হচ্ছে কি-না, যে ডিমান্ড দেয়া হয়েছে প্রেস গুলোতে তা নির্ধারণ করে পাঠ্য পুস্তক ছাপানোর নীতিমালাগুলো যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি-না, সেসব যাচাই-বাছাই করা হয়। আমাদের যে পরিদর্শন এজেন্ট তাদের রির্পোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা সার্টিফাই করলেই আমরা বুঝি যে বইয়ের কোয়ালিটি মেইনটেইন করা হয়েছে।’ এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী বছরের পাঠ্যপুস্তক নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ এবং মুদ্রণে কাগজের মান, দাম নির্ধারণে গত মঙ্গলবার এনসিটিবিতে একটি বহুপাক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। দ্রুত সময়ে মানসম্মত বই ছাপা নিশ্চিত করতে মুদ্রণকারীদের প্রতি সভায় অনুরোধ জানানো হয়। তিনি আরো বলেন, শিগগিরই পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তকগুলোর বিষয়ে কোয়ালিটি এনশিওর করার পরপরই আমরা মুদ্রণের কাজ শুরু করবো। আমাদের স্পেশাল এজেন্ট যারা টেন্ডার ড্রপ করেছেন তাদের ল্যাবগুলো ভিজিট করা হয়েছে। তাদের ক্যাপাসিটি কেমন তা পরীক্ষা করার জন্য।

সম্প্রতি শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় পাঠ্যবই দ্রুত পরিমার্জন করার কাজ চলছে বলে জানান। এ কারণে কিছু ভুল ভ্রান্তিও থেকে যেতে পারে বলেও শঙ্কা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার বাধ্যবাধকতার কারণে মাত্র দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে পাঠ্যপুস্তকের পরিমার্জন করতে হয়েছে। তাতে হয়ত কিছু ভুল-ভ্রান্তি থেকে যাবে। আশা করি সব মহলের ও শিক্ষাবিদদের পরামর্শে শিক্ষাক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পরবর্তীতে আরো সংস্কার সম্ভব হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তাপস কুমার বিশ্বাস বলেছেন, বছরের শুরুতেই নতুন বই পেতে সব শিক্ষার্থীদের ভাল লাগে। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ তাদেরকে নতুন করে লেখাপড়ার পরিবেশে ফিরিয়ে আনে। তিনি বলেন, বই ছাড়া শিশু খুশি হতে পারে না। এবার দেশের মানুষ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোতেও নানা সংকট ছিল, এরই মধ্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যে নতুন বই নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করবে তা খুবই আনন্দের বিষয়। এদিকে, নতুন বই বিতরণ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নীতিগতভাবে এবার বই উৎসবের আয়োজন করা হবে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে সময় মতো বই তুলে দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাতিল করা হয় ২০২৩ সালের প্রণয়ন করা কারিকুলাম। চলতি বছরে সে শিক্ষাক্রম অনুসরণ না করে ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ শিক্ষাক্রম অনুসারে আগামী শিক্ষাবর্ষে সব শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। পরিমার্জন ও সংশোধন করা এসব পাঠ্য পুস্তক নিয়ে কাজ চলছে। সূত্র : বাসস