শহীদ আবু সাঈদ তার কথা রেখেছেন : তথ্য উপদেষ্টা
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আবু সাঈদ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাঠ ছাড়েননি, তিনি প্রতিরোধ করেছিলেন। আবু সাঈদ তার কথা রেখেছেন। এখন তার আত্মত্যাগের প্রতিদান দেয়ার সময় এসেছে। গতকাল শনিবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে অনুষ্ঠিত এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে শহীদ আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে আখ্যায়িত করে উপদেষ্টা বলেন, আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা বলতে পারা অনেক বেশি সৌভাগ্যের। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে ছিলেন।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে আত্মত্যাগ করেছেন, তারা অবশ্যই তার প্রতিদান পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেকেই যাতে পায়, সেটাই সরকারের প্রত্যাশা। দেশের দুঃসময়ে ছাত্রদের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্ররা দেশের কল্যাণে বারবার রক্ত দিয়েছে। রাজনৈতিক সংকটে ছাত্ররা জাতিকে উদ্ধার করেছে এবং নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু ছাত্ররা এর সুফল পায়নি। ছাত্ররা পেয়েছে গেস্ট রুম, গণরুম ও দাসের জীবন। এ কারণে ছাত্ররা আজ ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ফ্যাসিবাদী কাঠামো ছিল বিধায় ছাত্রলীগ এতটা ক্ষমতা পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী ও প্রশাসন এই ক্ষমতার যোগানদাতা। অনেকে শুধু ছাত্রলীগকে দোষ দেন কিন্তু ছাত্রলীগের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভেঙে ফেলার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের যেন দলদাস হিসাবে ব্যবহার করতে না পারে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ছাত্রসংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন অতিদ্রুত ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সে বিষয়ে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রভাবিত করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি সরকারের নিকট যথাযথভাবে উপস্থাপন করার আশ্বাস প্রদান করেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: শওকাত আলীর সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক কমলেশ চন্দ্র রায়, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো: ফেরদৌস রহমান, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো: এমদাদুল হক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইলিয়াস প্রামাণিক, উপ-রেজিস্ট্রার মঈনুল আজাদ, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন। আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেটবৈষম্য নিরসন, গবেষণা কেন্দ্র চালুকরণ, ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সংস্কার-সহ বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করা হয়। আলোচনায় বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য প্রদান করেন শহিদ আবু সাঈদের পিতা মো: মকবুল হোসেন।
তিনি শহিদ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি করেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদের নামে একটি হলো প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আলোচনা সভার শুরুতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
আলোচনাসভা শেষে জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (জিআইজেড)-এর সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ল্যাপটপ ও চেক বিতরণ করা হয়। এরপর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রদত্ত গবেষণা প্রকল্পের চেক প্রদান করা হয়। আলোচনাসভার আগে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক উদ্বোধন করেন। এরপর উপদেষ্টা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্বাধীনতা স্মারক মাঠে এসে শেষ হয়। র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন। র্যালির পর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপণ করেন।