বন্দরের তদন্ত কমিটি

বহির্নোঙরে দুই জাহাজে আগুন নাশকতা নাকি অন্যকিছু?

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর কুতুবদিয়া চ্যানেলে এলপিজি বহনকারী একটি লাইটার জাহাজ ও একটি মাদার ভেসেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল বন্দরের সদস্য (হার্বার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর এম ফজলার রহমানকে আহ্বায়ক করে এবং নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিজিএফআই, এনএসআই, নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে ৮ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং এক্ষেত্রে এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা নিরূপণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত শনিবার দিবাগত রাত দিবাগত রাত একটার দিকে কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল পয়েন্টে নোঙর করা ‘সুফিয়া’ নামে এলপিজি বহনকারী একটি লাইটার জাহাজে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। এ সময় মাদার ভেসেল ক্যাপ্টেন নিকোলাসে হালকা আগুন ধরে। তবে এটির আগুন নাবিকদের চেষ্টায় কিছুক্ষণের মধ্যে নিভিয়ে ফেলা হয়। অন্যদিকে লাইটার জাহাজে লাগা আগুন নেভাতে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজ করে।

রোববার দুপুরের দিকে এটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। গত শনিবার রাতে আগুন লাগার পর লাইটার জাহাজের ১৮ জন ক্রু, দুজন মুরিং ম্যান, তিনজন প্রহরী এবং মাদার ভেসেল থেকে সাগরে ঝাঁপ দেয়া আটজন বন্দর নিরাপত্তারক্ষীসহ মোট ৩১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন বাংলাদেশি, আটজন ইন্দোনেশিয়ান এবং একজন ভারতীয় রয়েছেন। নৌবাহিনীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর তাদের একটি আবাসিক হোটেলে রাখা হয়েছে বলে জানা যায়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, আগুন নেভাতে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি তাদের তিনটি অগ্নিনির্বাপক টাগবোট কাণ্ডারি ৩-৪ ও ১০ কাজ করেছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন জহিরুল হক বলেন, মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে গ্যাস লোড করা হচ্ছিল। আগুনে মাদার ভেসেলের সঙ্গে লাইটার জাহাজকে বেধে রাখা দড়িটি ছিঁড়ে যায় এবং লাইটার জাহাজটি ভাসতে ভাসতে দূরে চলে যায়। গ্যাসভর্তি থাকায় লাইটার জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কোস্ট গার্ডের অগ্নিনির্বাপক টাগবোট প্রমত্ত, একটি টহল বোট ও আটটি স্পিড বোট কাজ করে। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতিতে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছিল। এর কয়েকদিন পর ৪ অক্টোবর দিবাগত রাতে এমটি বাংলার সৌরভ নামে বিএসসির আরেকটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত হয়। এদিকে, ১২ দিনের ব্যবধানে চারটি দেশীয় জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক বলে মত বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে ক্যাপ্টেন হিসেবে কাজ করা আতিক ইউ খানের। গত ৩০ বছরে এমন কিছু তিনি দেখেননি। গত শনিবার দিবাগত রাতে ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে এসব বিষয় উল্লেখ করেন। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘২৫ বছর বিদেশি জাহাজে ছিলাম। খুবই উঁচুমানের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল এবং সেভাবে মেইনটেইন করা হত। দেশীয় জাহাজে ১২ দিনের মধ্যে পরপর ৪টা জাহাজে অগ্নিকাণ্ড আর বিস্ফোরণ নিঃসন্দেহে খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা।