ঢাকা ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভারতীয় ভিসাপ্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে

বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভারতীয় ভিসাপ্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে

বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভারতীয় ভিসা পেতে দিনে দিনে ভোগান্তি বাড়ছে। ভারতে ভ্রমণেচ্ছুক বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসাপ্রাপ্তি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। আবার ডাবল এন্ট্রি ভিসা প্রক্রিয়া তো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। তবে মেডিকেল ভিসা চালু থাকলেও তা সীমিত সংখ্যক। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতীয় ভিসা আবেদন বন্ধ রেখেছে। উভয় দেশের কূটনৈতিক সুসম্পর্কে টানাপোড়েন থাকলে দুই দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়বে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ইউরোপের বেশকিছু দেশের দূতাবাস ও ভিসা অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং আউটসোর্স না থাকায় ভারতের ওপর নির্ভর করতে হয় ইউরোপগামী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের। কিন্তু গত আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভারতীয় ভিসা বন্ধে আবেদনকারীরা সরাসরি দূতাবাস থেকে সেবা পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ভারতীয় দূতাবাসের এমন একচেটিয়া সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরতা কমাতে ভিসাপ্রত্যাশীরা গত ৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান, ভোগান্তি কমাতে বাংলাদেশেই বিভিন্ন ইউরোপের সব দেশের দূতাবাস অথবা ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার চালু করা হোক। তারা বলছেন, ভ্রমণ, পড়াশোনা, ব্যবসা এবং চিকিৎসার জন্য ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের ভিসার জন্য হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ টাকা খরচ করেও অনেকে ভিসা পাচ্ছে না। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ইউরোপীয় ভিসাপ্রত্যাশীরা। মানববন্ধনে ইউরোপগামী যাত্রী পরিষদের সদস্যরা বলেন, ভারতীয় দূতাবাসের ওপর নির্ভর থাকায় অনেক সময় ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ভ্রমণ বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজও বিঘ্নিত হয়। দূতাবাস এবং ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার বাংলাদেশে স্থাপিত হলে আবেদনকারীরা সহজে এবং দ্রুত সেবা পাবেন। মানববন্ধনে রবিউল আলম বলেন, বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং পেশাজীবীদের মধ্যে ইউরোপে যাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। এতে করে ভিসা প্রক্রিয়ার সুবিধা বাড়ানো দরকার, যাতে বৈধভাবে ভ্রমণ ও অভিবাসন সহজ হয় এবং অবৈধ উপায়ে ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভারতের ভিসা নীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি যে, আমরা ভারতের সঙ্গে ভালো এবং মজবুত সম্পর্ক চাই। কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরকে শোনা এবং বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশি পরজনগণ ভারতের ভিসা সংক্রান্ত সীমাবদ্ধ নীতির প্রতি অসন্তুষ্ট, এটা ভারতীয় সরকার অবশ্যই শুনেছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভারত স্পষ্টভাবে বলে আসছে যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা কিছু করতে পারবে না। আমি মনে করি না যে, বাংলাদেশে এমন কোনও পরিস্থিতি আছে, যার কারণে কোনো বিদেশি দেশ ভিসা সীমাবদ্ধ করতে পারে। কারণ অন্য কোনও দেশ এই ধরনের কোনও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেনি। আমাদের জন্য এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, যাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে, তাদের কেউ কেউ হয়তো ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। হয়তো এটিই ভারত সরকারের পরিবর্তিত পরিস্থিতি বলতে বোঝানো হচ্ছে, আমরা নিশ্চিত নই। কারণ অন্য কোনো দেশ যেমন- আমেরিকা, ইউএই, বা জাপান এই ধরনের ভিসা সীমাবদ্ধতা আরোপ করেনি। হয়তো ভারত সরকার তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

শাহজালাল নামের এক ভিসাপ্রত্যাশী বলেন, ভারতের খামখেয়ালির কারণে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ইউরোপের ভিসাপ্রত্যাশী বাংলাদেশিদের চরম বিপত্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। শুধুমাত্র ভারতীয় ভিসা না পাওয়ার কারণে কয়েক হাজার বাংলাদেশি ইউরোপের অ্যাম্বাসি ফেস করতে পারছেন না। ফলে বাংলাদেশিরা ইউরোপের ভিসা পাচ্ছেন না। এতে বাংলাদেশ বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, বর্তমানে ভারত ডাবল এন্ট্রি ভিসা ইস্যু বন্ধ রাখায় ইউরোপগামী প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী ভিসা পেতে জটিলতায় পড়েছেন। একইসঙ্গে, ভিসা ফি এবং টিউশন পেমেন্টের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই পূর্ব ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পেয়েছেন।

ভালাহিয়া ইউনিভার্সিটি অফ তার্গোভিস্তে- তে সুযোগ পাওয়া তানজিম হাসান তুষার বলেন, পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় হাজারের মতো শিক্ষার্থী অফার লেটার পেয়েছে। অনেকেই আগস্টে দিল্লিতে ভাইভার ডেট হলেও ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা আবেদন অফ হয়ে যায়। এখন আমাদের উচ্চশিক্ষা অনিশ্চত।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গত ৭ আগস্ট ভারতীয় ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় সব ভিসা সেন্টার বন্ধ থাকবে। পরবর্তী আবেদনের তারিখ এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।

পোল্যান্ড যেতে ইচ্ছুক সোলেইমান বলেন, আমার ভাগিনা পোল্যান্ডে বসবাস করছে, সে আমার জন্য একটি ফার্মে কাজ ঠিক করেছে, কিন্তু এখন শুনছি ভারত ডাবল এন্ট্রি ভিসা বন্ধ করেছে। নভেম্বরের শেষের দিকে দিল্লির পোল্যান্ড দূতাবাসে ভাইভার কথা রয়েছে, কিন্তু এখন ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা না পেলে পোল্যাল্ডে যাওয়া সম্ভব হবে না। এমন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন সোলেইমান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশী পাসপোর্টে ভারত ডাবল এন্ট্রি ভিসা দেয়া বন্ধ রেখেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের অভিযোগ পেয়েছি। ভিসার জটিলতা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সুরাহা জটিল হয়ে পড়েছে।

চেক রিপাবলিকে সুযোগ পাওয়া মাইন উদ্দিন বলেন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, বুলগেরিয়া, চেক রিপাবলিক, রোমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই। এসব দেশে পড়তে হলে ভারতে ভিসা সাক্ষাৎকার দিতে হয়। কিন্তু ভারতের ভিসা না থাকায় তারা নির্দিষ্ট দেশের অ্যাম্বাসিতে সাক্ষাৎকার দিতে পারছেন না। তাই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত