হঠাৎ বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের টুইট
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) একটি টুইট করেছেন। গত ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী রাত ১১টায় পোস্ট করা সেই টুইটটিতে তিনি সবাইকে হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব দীপাবলির শুভেচ্ছাও জানান।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েক মাস ধরেই এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিন্দু অধ্যুষিত রাষ্ট্র ভারতের সম্পর্কে ভাটা দেখা দিয়েছে। এখন, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকার পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইট বাংলাদেশকে আসলে কী বার্তা দিচ্ছে? এটি কি স্রেফ নির্বাচনি প্রচারণা নাকি ইউনূস সরকারকে চাপে ফেলতে ভারত বা মোদি সরকারের কোনো কৌশল? এমন নানা সমীকরণ মেলানো হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই টুইটটি ঘিরে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার টুইট শুরুই করেছেন এভাবে- বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর ‘বর্বর’ সহিংসতা চালানো হচ্ছে এবং তারা হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন। এসবের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন যে, বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ ‘বিশৃঙ্খল’ অবস্থার মাঝে রয়েছে। যদিও তার এই শুরুর বক্তব্যের সাথে একমত নন বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্য দেশের অনেক বিশ্লেষক। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর বাংলাদেশে যে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে সেটিও অস্বীকার করছেন না তারা।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারবিষয়ক সিনিয়র কনসালট্যান্ট টম কিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, তবে এগুলো মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।
ট্রাম্প বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কতটা অবগত, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ভারতের কিছু ডানপন্থি মিডিয়া ও রাজনীতিবিদ এই ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করেছে। তাই এটি রাজনৈতিক চাল হতে পারে। অথবা, তিনি ভুল তথ্য পেয়েছেন ও তা বিশ্বাস করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবিরও মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফিড করা হয়েছে’। অর্থাৎ, তাকে এটি বোঝানো হয়েছে। ‘নয়তো, তার এই ধরনের কথা বলার কথা না। কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়ে যে সমস্ত শব্দ ব্যবহার করেছেন, এইগুলো খুবই শক্ত শব্দ।’
দিল্লির কাছে ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছেন বহু বছর ধরে। তিনিও এই কথা স্বীকার করেন যে, ভারতীয় গণমাধ্যমে এই ঘটনাগুলো অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার হয়েছে। তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা যে ঘটেছিল সেটিও মনে করিয়ে দেন তিনি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ব্যাপারে ভারতের গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সঙ্গেও এ বিষয়টি নিয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ছোট ঘটনাকে বড় করে’ বলে আসছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য ধর্মকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়, ট্রাম্পের টুইট তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। হিন্দু ধর্মাবলম্বী, প্রধানত ভারতীয়দের ভোট নিশ্চিত করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য।
আলী রীয়াজ বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানও। কেবল আলী রীয়াজ-ই নন, অন্যান্য বিশ্লেষকরাও একমত যে, ট্রাম্পের এই টুইটের মূল লক্ষ্য আসন্ন মার্কিন নির্বাচন।
এই প্রশ্নের উত্তর ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটেই পাওয়া যায়। সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গে কথা বলার পরই তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের কথা বলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে কখনোই ‘এমনটি’ ঘটতো না। কমালা হ্যারিস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘আমেরিকা ও সারা বিশ্বের হিন্দুদের উপেক্ষা করেছেন বলেন ট্রাম্প। তিনি ‘আমেরিকার হিন্দুদেরকে চরমপন্থী বামদের ধর্মবিরোধী এজেন্ডা থেকে রক্ষা’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টুইটে বলেন, ‘আমরা তোমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়ব। আমার প্রশাসনের অধীনে আমরা আমাদের মহান অংশীদার ভারত এবং আমার মিত্র প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে সম্পর্ক আরও মজবুত করব।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা অজানা নয়।
এর আগেরবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণায় নরেন্দ্র মোদি সমর্থন করেছিলেন। এখন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আগে সেই বন্ধুত্বকেই কাজে লাগাচ্ছেন ট্রাম্প।