ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাফজয়ীদের সংবর্ধনা

সাবিনাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার

সাবিনাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার

ফিফার পুরুষ র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ দলের অবস্থান প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। একের পর এক ব্যর্থতার জন্ম দিয়ে দেশবাসীকে হতাশায় নিমজ্জিত করছেন জামাল ভূঁইয়ারা, তখন আশার আলোকবর্তিকা হয়ে উঠছেন সাবিনা খাতুনরা। অথচ তিন মাস ধরে বকেয়া রয়েছে তাদের প্রাপ্য বেতন। শুধু তা-ই নয়, মে ও জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত চারটি ম্যাচের ম্যাচ ফিও এখনো বুঝে পাননি নারী দলের ফুটবলাররা। নানা প্রতিকুল অবস্থা পেরিয়ে হিমালয়ের বুকে আরও একবার লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার জিতেছে সাফের শিরোপা। বিজয়ের দিনেই দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী মেয়েদের সংবর্ধনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাফজয়ী মেয়েদের সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে অনুষ্ঠানের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টাকে নিজেদের সমস্যার কথাও জানিয়েছেন মেয়েরা। প্রধান উপদেষ্টা খুব ধৈর্য সহকারে নারী ফুটবলারদের কথা শুনেছেন। বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেছেন এবং সেগুলো লিখিতভাবে দেয়ার জন্য বলেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা সাবিনাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমি পুরো জাতির পক্ষ থেকে তোমাদের অভিনন্দন জানাই। জাতি তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়, আর তোমরা সেই সাফল্য এনে দিয়েছ।’ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। অনেক বাধা পেরিয়ে আমরা আজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। শুধু এই ফুটবল দলই নয়, বাংলাদেশের নারীদের সামগ্রিকভাবে নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’ অধিনায়ক যোগ করেন, ‘আমাদের অনেকে সাধারণ পরিবার থেকে এসেছে এবং তাদের নিজেদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হয়। আমাদের বেতন খুব বেশি নয়। এই বেতন দিয়ে পরিবারকে তেমন কোনো সাহায্য করতে পারি না।’ এই তারকা স্ট্রাইকার তার কয়েকজন সহযোদ্ধার সংগ্রামের গল্প, যেমন মারিয়া মান্দার কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলসিন্দুর গ্রামের মারিয়া, যেখান থেকে সাফজয়ী দলের ছয়জন খেলোয়াড় এসেছেন, ছোটবেলায় তার বাবাকে হারান এবং মা তাকে বড় করেন। এ সময় উইঙ্গার কৃষ্ণা রানী সরকার ঢাকায় তাদের আবাসন সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। অন্যদিকে মিডফিল্ডার মানিকা চাকমা খাগড়াছড়ি জেলার দুর্গম লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ফুটবলার হিসেবে উঠে আসার সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী তার নিজ জেলা দিনাজপুরের রানীশংকৈল উপজেলায় তার গ্রামের দুর্বল অবকাঠামোর কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তাদের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা ও তাদের বিভিন্ন দাবি আলাদাভাবে কাগজে লিখে তার কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য বলেন। অধ্যাপক ইউনুস বলেন, ‘তোমরা যা কিছু চাও তা লিখতে দ্বিধা করো না, আমরা তোমাদের দাবিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করব। যদি কিছু এখনই করা সম্ভব হয়, আমরা তা করব।’

এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন বাংলাদেশ দলের ২৩ ফুটবলার। তাদের সঙ্গে ছিলেন দলের ম্যানেজার মাহমুদা অনন্যা এবং প্রধান কোচ পিটার বাটলারও। সংবর্ধনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খেলোয়াড়দের কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আজকে সকালের নাস্তায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সাফ জয়ী নারী ফুটবল দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। স্যার আজকে খুব ধৈর্য সহকারে নারী ফুটবল দলের প্রত্যেকের কথা শুনেছেন। তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেছেন। এবং সেগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত লিখিত দেয়ার জন্য বলেছেন। এবং সেগুলো লিখিত পেলে আমরা যেন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি।’

একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টাকে নিজেদের স্বাক্ষর করা জার্সির সঙ্গে ফুটবলও উপহার দেন মেয়েরা। এ প্রসঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আর নারী ফুটবল দলের ফুটবলাররাও স্যারকে প্রত্যেকের সাইন করা জার্সি ও ফুটবল উপহার দিয়েছেন। ... তাদের সমস্যাগুলোর বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেগুলো সমাধানে স্যার ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলেছেন।’ কোন ধরণের সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে তা জানতে চাইলে আসিফ আরও বলেন, ‘আবাসন সমস্যা, অনুশীলন, বেতন কাঠামো সব কিছু নিয়েই কথা হয়েছে। খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এখানে এমন না যে কোনো কিছু আসেনি, সব কিছুই এসেছে। এই সবগুলোই আমরা এড্রেস করব এবং সেজন্য প্রত্যেককেই বলা হয়েছে আমাদের লিখিত দিতে দুই তিন দিনের মধ্যে। এবং সরাসরি আমি স্যারকে সেটা পৌঁছে দিব।’

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার, কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা অক্ষুণ্ণ রাখে বাংলাদেশ দল। পরের দিন শুক্রবার ঢাকায় ফেরার পর জমকালো সংবর্ধনা পান চ্যাম্পিয়নরা। যেখানে একটি ছাদখোলা বাসে শহরের চারপাশে ভ্রমণ করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সদর দফতরে পৌঁছান মেয়েরা। যেখানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও তাদের অভ্যর্থনা জানান। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে এক কোটি টাকার চেক দেয়া হয় তাদের। এছাড়া তাদের জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত