ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ২০০ জনের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া শুরু করেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। গতকাল শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর হাতে চার ধাপে সহায়তার চেক তুলে দেয়া হচ্ছে। ঢাকার পর দেশের অন্য বিভাগেও ধাপে ধাপে গণঅভ্যুত্থানের সব শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। আহত ব্যক্তিদের দেয়া হবে ১ লাখ টাকা করে। তা বিকাশে দেয়া হবে। ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই সহযোগিতা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। গতকাল নগর ভবনে প্রথম ধাপের আয়োজন শুরু হয় সকাল ৯টায়। তথ্য হালনাগাদ শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয় মূল আয়োজন। অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টা দুই ধাপে ১০০ পরিবারের মধ্যে চেক বিতরণ করেছেন। প্রথম ধাপে ৫০টি শহীদ পরিবারের হাতে চেক হস্তান্তর করেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘এই কাজ আমরা (মুক্তিযুদ্ধের পর) ’৭২, ’৭৩ সালে করতে পারিনি। সে জন্য বলব, আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি।’ অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে এই আন্দোলন শুরু হলেও পরে এটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছিল। ফলে ’২৪-এর অভ্যুত্থানটি সংঘটিত হয়েছে। এই আন্দোলনে বিভিন্ন পর্যায়ে যারা সমন্বয় করেছেন, তাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। বয়স ও অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু তাদের চেষ্টা বা আগ্রহের বিন্দুমাত্র কমতি নেই। আহত ও শহীদ পরিবারের পাশে যেভাবে দাঁড়ানো প্রয়োজন ছিল, তা সম্ভব হয়নি জানিয়ে সারজিস আলম, ‘প্রয়োজনে এই ফাউন্ডেশনকে আমরা আমাদের জীবনের বিনিময়ে বাঁচিয়ে রাখব। যত দিন একজন আহত ভাইও বেঁচে থাকবেন, যত দিন শহীদ পরিবারের সদস্যরা থাকবেন।’ সহায়তা মাত্র শুরু হয়েছে, উল্লেখ করে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ধাপে ধাপে সহায়তা অব্যাহত থাকবে। সেটা আর্থিক সহযোগিতা হতে পারে, আবার দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনও হতে পারে। অথবা শহীদ পরিবার থেকে অন্তত একজনকে চাকরির ব্যবস্থা করেও এই ব্যবস্থা হতে পারে। আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন বা দীর্ঘমেয়াদি সম্মানী ভাতার মতো নানা পরিকল্পনা রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ৫০ শহীদ পরিবারের হাতে চেক তুলে দেন। তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও এরই মধ্যে নগরে ভবনে এসে উপস্থিত হয়েছে। তারা দুই ধাপে বাকি ১০০ পরিবারের মধ্যে চেক তুলে দেবেন। শাহবাগে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পাশে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় রয়েছে। শহীদ পরিবারের সদস্য বা আহত ব্যক্তিরা যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে সেখানে আসতে বা ফাউন্ডেশনের জরুরি হেল্পলাইন নম্বর ১৬০০০-তে যোগাযোগ করতে পারবেন। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি শহীদ এবং ২৪ হাজার আহত ব্যক্তির পরিচয় প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। তারা জানায়, তালিকাটি বারবার যাচাই করা হচ্ছে।