আমরা ক্ষমতায় যেতেই রাজনীতি করছি
উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
‘রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যেতে উসখুস করছেন’- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় যেতেই চাই, সে জন্যই তো রাজনীতি করছি। গতকাল রোববার বিকালে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, একজন উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উসখুস করছে। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক কথা। আমরা আশা করি না, তিনি এই ধরনের মন্তব্য করবেন। আমরা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছি, কারণ যত দেরি করবেন হাসিনারা ফিরে আসবে। আমরা সহযোগিতা করছি আপনারাও সহযোগিতা করেন। আমরা ক্ষমতায় যেতেই চাই, সেজন্যই তো রাজনীতি করছি। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আমরা ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি। আপনাদের সঙ্গে যখনই দেখা হতো তখনই বলতাম আমাদের বুকে পাথর হয়ে বসে আছে। পাথর গেলেও এখনও স্বস্তি নেই। কোথায় যেন আটকা আছি। আটকা আছি, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখন সরকার আছে সেটা অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি বলেন, সংবাদপত্রে এসেছে প্রতি বছর ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। হিসাব করে দেখা গেছে ১০০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। একেবারে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে মানবিকতাকে। যেখানে যাবেন আওয়ামী লীগের চোরেরা বসে আছে। এখনও বসে আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার শুধু বিএনপির সঙ্গে নয়, সব দলের নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিলো। ঢাকা শহরের সব সড়কের নামগুলো বিশিষ্ট মানুষের নামে করে দিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।
তরুণদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন তরুণ প্রজন্মের যুগ। যখন আব্বাস ও খোকা ভাই ছিলেন তখন ঢাকা শহর কাঁপতো। তোমাদেরও কাঁপাতে হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা খোকা ভাইয়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কখন পরাজিত হয়? যখন মানুষটিকে মানুষ নিজের কাছের মানুষ হিসেবে বেছে নেয়। আমি তাকে কখনও উত্তেজিত হতে দেখিনি, অত্যন্ত ভাবনা-চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। তার মৃত্যু আমাদের কাছে পাহাড়ের মতো ভারি হয়েছিলো।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য ও সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন প্রমুখ। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু ও সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী দিনে যাতে ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসতে না পারে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এদের চিরতরে নির্মূলে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে জনপ্রিয় নেতা ভোটে প্রতিযোগিতা করে জয়ী হয়েছিলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টরা জোরপূর্বক সেই ফলাফল কেড়ে নিয়েছিল।
বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিচার বিভাগ ন্যায়বিচারের মাধ্যমে ডা. শাহাদাতকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। আদালতের রায় মেনে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
ফ্যাসিস্টরা যাতে আগামীতে ফিরে আসতে না পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টদের বিদায় জানানো হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে যাতে ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসতে না পারে, জনগণের দুর্বার প্রতিরোধের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ যেন চিরতরে নির্মূল হয়।
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় যেন সেই প্রত্যাশা সবার বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
এদিকে, চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার যে ইশতেহার ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন হবে গ্রিন ও ক্লিন সিটি করপোরেশন- সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাবো। চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।
শ্রদ্ধা নিবেদনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ চট্টগ্রাম বিএনপি মহানগর ও বিভাগীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।