৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ

সংবিধান সংস্কারে মতামত নেবে কমিশন

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধান সংস্কারে জনগণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত নেবে কমিশন। এ জন্য একটি ওয়েবসাইট খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার থেকে এই ওয়েবসাইট কার্যকর হবে। একই সঙ্গে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ তুলে ধরা হবে। গতকাল রোববার বিকালে জাতীয় সংসদের এলডি মিলনায়তনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, কমিশন এই পর্যায়ে সংবিধান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, সিভিল সোসাইটির সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, পেশাজীবী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, তরুণ চিন্তাবিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব আহ্বান করবে। আলী রীয়াজ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। আমরা আশা করছি যে আগামী সপ্তাহ থেকেই অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে সক্ষম হব। সংস্কারের সুপারিশ প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন সরাসরি আলোচনা করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করব লিখিত মতামত এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর জন্য। সরকার বিভিন্ন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। ফলে, কমিশনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবে না। কিন্তু তাদের দেয়া প্রতিটি লিখিত প্রস্তাব ও মতামত কমিশন নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করবে এবং কমিশনের সুপারিশে তার যথাসাধ্য প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট থাকবে।

অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানান, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ তুলে ধরবে কমিশন। তবে, কোন পদ্ধতি কাজ করা হবে সে বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জুলাই বিপ্লবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্তদের পরামর্শ কমিশন নেবে না জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা দল জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সক্রিয়ভাবে হত্যাকান্ডে যুক্ত থেকেছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকান্ড ও নিপীড়নকে সমর্থন করেছে, ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমকে বৈধতা প্রদানে সাহায্য করেছে কমিশন সেইসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার প্রস্তাবের সুপারিশ তৈরিতে যুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সংস্কারের পরিধি কেমন হবে সে প্রসঙ্গে ৭টি উদ্দেশ্য তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত হবে বর্তমান সংবিধান পর্যালোচনাসহ জনআকাঙ্খার প্রতিফলনের লক্ষ্যে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, পুনর্বিন্যাস এবং পুনর্লিখন।

দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রতিশ্রুত উদ্দেশ্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এবং ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আলোকে বৈষম্যহীন জনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জনআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানো। রাজনীতি এবং রাষ্ট্রপরিচালনায় সর্বস্তরে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ— নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন। রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক এবং আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।

সংবিধান সংস্কারের পর বাস্তবায়ন এই সরকার করবে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, এটা একেবারেই পলিটিক্যাল ডিসিশন। শুধুমাত্র ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে কমিশনে রাখা হয়েছে। সেই হিসেবে আমি বলতে পারি, অবশ্যই অবশ্যই এই সরকার করবে। কেন করবে না! এই সরকার ছাড়া কেউ এটা করবে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, মো. মুসতাইন বিল্লাহ।