স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের তিন মাস আজ

ভারতে বসে করছেন ষড়যন্ত্র

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের তিন মাস পার করছে বাংলাদেশ। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। ভারতে থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র করছেন। বিভিন্ন সময়ে দেশের ভেতরে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়েও শেখ হাসিনা ভারতে ৬ বছর রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে এবার শেখ হাসিনা নিজ দেশে স্বৈরশাসকের তকমা নিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে শেখ হাসিনা আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে বিশৃঙ্খ পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা করছেন। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনালাপ করছেন। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পতনের পর পুলিশশূন্য ঢাকা, আতঙ্কে ফাঁকা হয় বহু থানা। দেশ ছেড়ে পালানোর পর বাংলাদেশে আবারও বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পালানোর তিন দিন পর অথ্যাৎ ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের দায়িত্বে আসেন। পরে দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। স্বৈরাচারের থাবামুক্ত হওয়ায় ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন কেন্দ্র করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন হাজারো মানুষ। চোখের আলো নিভে গেছে প্রায় পাঁচশ’ জনের। শরীরে বুলেটের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন শত শত আমজনতা। শিশু, কিশোর, নারী থেকে শুরু করে বৃদ্ধের শরীর ভেদ করে বেরিয়ে গেছে গুলি। হাসিনা সরকারের দমন পীড়নের সামনে রাজপথে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ছাত্র-জনতা। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের গোড়ায় শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মধ্য জুলাইয়ে এসে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় রূপ নেয় গণবিস্ফোরণে। সরকারের অত্যাচার নিপীড়নের সঙ্গে যোগ হয় স্বৈরাচারের পদলেহনকারী কিছু অতিউৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তার মানবাধিকারবিরোধী নৃশংসতা। নির্বিচার গণহত্যা নিশ্চিত করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। গত ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে গিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার সদস্য ও উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের অনেক এমপির বিরুদ্ধে নিহতদের পরিবার হত্যা মামলা দায়ের করছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এরইমধ্যে দুই শতাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনার পরিবারের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যেই স্বৈরাচারী সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। রিমান্ডে বেরিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ক্ষমতাধর এসব ব্যক্তিদের দমন, পীড়ন, লুটপাট, দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনার এখন আর কোনো পাসপোর্ট নেই। স্বৈরশাসকের আর্শিরবাদপুষ্ট প্রশাসনের শীর্ষপদে রদবদল করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলোতে এসেছে বড় পরিবর্তন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেককে বিতর্কিত উল্লেখ করে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিকল্পে যৌথ অভিযান পরিচালনা ও সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর জনপ্রত্যাশার চাপও অনেক। পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তার সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় তার খ্যাতি ও পরিচিতিতে আশার আলো দেখছে দেশবাসী। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসেবে মেলাতে শুরু করেছেন অনেকে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরপূর্বক মানুষকে নিখোঁজ করা হয়েছে, যেখানে কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার পর সেই ব্যক্তিকে আটক করার বিষয়টি অস্বীকার করে। পুরো প্রক্রিয়াটি অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সরকারবিরোধী ও সমালোচকদের দমন করার জন্য জোরপূর্বক গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছিল হাসিনার সরকার। হাসিনা সরকারের পতনের পর জোরপূর্বক গুমের শিকার হওয়া কয়েকজন মুক্ত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়েও কয়েকজন ছাত্রনেতাকে অল্প সময়ের জন্য জোরপূর্বক গুম করা হয়েছিল, তবে তাদের দ্রুতই মুক্তি দেয়া হয়। হাসিনার বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের অন্যতম একটি কারণ হলো সমালোচনাকে দমন করতে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা। ২০০৯ সালে রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায় বহু নিরীহ সৈনিকের ওপর চাপানো হয়। হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের আড়াল করতে বিনাপরাধীদের জেলখানায় পাঠানো হয়।