জনগণ প্রয়োজন মনে করলে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে বলে মনে করেন ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. কামাল হোসেন। তবে সংবিধানে যেনতেনভাবে হাত দেয়া যাবে না বলে মনে করেন খ্যাতিমান এই আইনজীবী। বিশেষ করে সংবিধানের মূল ভিত্তিতে হাত না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্ট বারের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে ড. কামাল এসব কথা বলেন। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সেই কমিশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। সংবিধান সংশোধন নাকি পুনর্লিখন এটা নিয়ে বিতর্ক চলছে। বাংলাদশে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আইনজীবী ড. কামাল হোসেন সংবিধান ইস্যুতে বলেন, প্রয়োজনে নীরব না থেকে সোচ্চার হতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন হতে পারে। আজ থেকে দশ বছর আগে দেশের অবস্থা যেমন ছিল এই মুহূর্তে সেটি নাও থাকতে পারে। এ জন্য সংবিধান সংশোধন হতে পারে। তবে সংবিধানে যেনতেনভাবে হাত দেয়া যাবে না। বিশেষ করে সংবিধানের মূল ভিত্তিতে। একই অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, সংবিধান ৫৩ বছর আগে প্রণয়ন হয়েছে। কামাল হোসেন তখন ছিলেন তরুণ আইনজীবী। ৫৩ বছর পর সংবিধানের বানান এখনো ভুল। বানানটা হবে সংবিধান। যা তৈরি করা হয়েছিল তার আর অবিকল নেই। সরকার বা শাসকরা তাদের স্বার্থে এটি করেছে। সংবিধানের নাম ভুল আছে। এদেশে রাজা নেই রানী নেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান হবে না? একশ বছর আগে গণতন্ত্র ছিল। এখন সেটি নেই। আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদের বেশি থাকবে না। রাষ্টপতি নির্বাচন সংসদ দিয়ে হবে না। জনগণ কর্তৃক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণে হলে চলবে না? আদালত সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করছে। স্বৈরতন্ত্রকে সরিয়ে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আছি। এই সরকার সংবিধান সংশোধন করতে পারে না? এটা করবে নির্বাচিত সরকার। তারা সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করতে পারে। ৮৪ বার সংশোধন করে সংবিধান চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সংবিধান রাষ্ট্রীয় দলিল। দলীয় বা ব্যক্তিস্বার্থে যদি সংবিধান পরিবর্তন করতে চায়, তাতে লাভ হবে না। যারা সংবিধান সংশোধন করতে চান, তাদের উচিত রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করা। সংবিধান দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি। এতে সভাপতিত্ব করেন আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী। আরো বক্তব্য দেন জেড আই খান পান্না, ড. শাহদিন মালিক প্রমুখ।