নতুন প্রেসিডেন্টের অপেক্ষায় হোয়াইট হাউজ

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের আগামীর প্রেসিডেন্ট নির্ধারণে আনুষ্ঠানিক ভোটের লড়াই শেষে নতুন প্রেসিডেন্টের অপেক্ষায় রয়েছে হোয়াইট হাউজ। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। নির্বাচনি কর্মকর্তারা ভোট গণনার আগপর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে হচ্ছে। এতে কে জয়ী হচ্ছেন, তা জানতে কয়েক দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মার্কিন ব্যবস্থায় নাগরিকদের সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। নাগরিকদের ভোট ভাগ হয়ে যায় ৫৩৮টি নির্বাচক ভোটের মধ্যে। এই ভোটগুলোর বিন্যাস ঠিক করে দেয়, কে হবেন প্রেসিডেন্ট। যে প্রার্থী জনগণের ভোট জিতে নেন, প্রতিটি রাজ্য তার ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটগুলো ওই প্রার্থীকে দেয়। বড় রাজ্যগুলোর ভাগে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট বেশি থাকে। সেসব রাজ্যে কংগ্রেসের প্রতিনিধি বেশি। এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাদের মধ্যে অন্তত ২৭০টি গুরুত্বপূর্ণ ইলেকটোরাল ভোট পেতে কঠিন লড়াই হবে। এ সংখ্যাটি প্রেসিডেন্ট হওয়ার নিশ্চয়তা দেবে। এবারের নির্বাচনের লড়াই একেবারে শেষ সময় পর্যন্ত গড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা ভোটের ফলাফল প্রকাশে দেরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন। এ ছাড়া ভোট গণনা নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মতো জটিলতাও তৈরি হতে পারে।

নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ ভোটার এরই মধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন। অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে প্রথম ভোট গ্রহণ ‘ইস্টার্ন টাইম’। কিন্তু নির্বাচনি লড়াইয়ে দুইপ্রার্থীর ভোট সমান হলে বিজয়ী নির্ধারণ করতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে।

পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য দুই দলের জন্য জয়-পরাজয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। অঙ্গরাজ্য দুটিতে ৫ নভেম্বরের আগে ভোট গণনার প্রক্রিয়া শুরু করার নিয়ম নেই। এতে সার্বিকভাবে ভোট গণনা ধীর হতে পারে। অঙ্গরাজ্য পর্যায় থেকে নির্বাচনি ফলাফলের সত্যায়ন করতে হয়। ফলাফল সত্যায়নের এ শেষ সময় ১১ ডিসেম্বর। আর ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সিনেট সভাপতিকে (বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস) প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোটের সনদ গ্রহণ করতে হবে। সূত্র: রয়টার্স

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২০২২ সালের (মধ্যবর্তী) নির্বাচনে ফলাফল দেরিতে সত্যায়নের পক্ষে মত দিয়েছিলেন অন্তত ২২ কাউন্টির নির্বাচনি কর্মকর্তারা, যা ২০২০ সালের (প্রেসিডেন্ট) নির্বাচনের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। ওয়াশিংটনের ‘সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিকস (সিআরইডব্লিউ)’ নামের একটি সংগঠন বলেছে, সেবার অন্তত ৩৫ জন নির্বাচনি কর্মকর্তা ফলাফল সত্যায়ন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এবং সম্ভবত পুনরায় নির্বাচন চাইছিলেন। এবার তারা একই কাজ করতে পারেন। সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, সফল প্রতিবন্ধকতার কারণে অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ভোটের ফলাফল সত্যায়নের তারিখ বদলে যেতে পারে। এবার নির্বাচনকে ঘিরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাসহ ঘটেছে নানা নাটকীয় ঘটনা। সেই সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানের পাশাপাশি প্রাধান্য পেয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক ইস্যুও। নির্বাচনি প্রচারণায় এবার অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক যুদ্ধ ও সংঘাত, অথনৈতিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ সংকটগুলোও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।

সেপ্টেম্বরে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার প্রথম বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, গর্ভপাত আইন, প্রজেক্ট-২০২৫, পররাষ্ট্র নীতি ছাড়াও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, আফগানিস্তানে তালেবান ইস্যুসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন উভয় প্রার্থীই। নির্বাচনি প্রচারণায় হ্যারিস ‘অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি’ গড়ে তোলার বিষয়ে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাষ্ট্রে আবাসনের খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। নির্বাচনি প্রচারণার ইস্যুতে এবার ‘প্রজেক্ট-২০২৫’ বেশ আলোচিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ডানপন্থিদের তৈরি একটি পরিকল্পনা হলো ‘প্রজেক্ট-২০২৫’। এতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বাড়ানোসহ বিভিন্ন উগ্র-ডানপন্থি নীতি গ্রহণের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এটিকে অবশ্য ‘বিপজ্জনক পরিকল্পনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন হ্যারিস। ওই প্রজেক্টের সঙ্গে ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতার দাবি করেছেন তিনি। ভোটারদের সতর্ক করে হ্যারিস বলেন, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। তবে ট্রাম্প অবশ্য এমন অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন। এবারের নির্বাচনি প্রচারণায় দেশটির গর্ভপাত নীতিটিও বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প এই নীতির সমালোচনা করে বলেন, ডেমোক্র্যাটরা গর্ভধারণের ‘নবম মাসে’ গর্ভপাতের অনুমতি দিতে চায়। এদিকে, হ্যারিস অভিযোগ করেন, দুই বছর আগে ট্রাম্পই সুপ্রিমকোর্টের তিনজন বিচারপতিকে নিয়োগ করে গর্ভপাতের জাতীয় অধিকারকে বাতিল করেছিলেন।

অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানের বাইরে উভয় প্রার্থীর ভোটের প্রচারণায় গাজা-ইরায়েল যুদ্ধও গুরুত্ব পাচ্ছে। সংঘাত নিয়ে উভয় প্রার্থীই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। এই যুদ্ধের ‘অবসান হওয়া উচিৎ’ বলে মন্তব্য করেন হ্যারিস। তিনি বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয়’ সমাধানই একমাত্র পথ। অন্যদিকে, ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে গাজা-ইরায়েল যুদ্ধ ‘কখন শুরুই হতো না।’

হ্যারিসকে ‘দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ভাইস-প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও বেঁধে যেতে পারে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়েও বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন এই দুই প্রার্থী। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন। এদিকে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনকে সমর্থন জানানোর ঘোষণা দিয়েছেন হ্যারিস।