সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক সমাধান চান

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করছেন। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সাত কলেজের সমস্যার যৌক্তিক সমাধান চান শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় যে সাত কলেজ দেখভালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই পুরোপুরি আলাদা একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে আলাদা রেজিস্ট্রারসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন। এ কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকবে। গত ৩১ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে তো বটেই, সেই সঙ্গে তারা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের ‘অবিবেচক বক্তব্য’ প্রত্যাহার করার দাবিও তুলেছেন।

সাত কলেজের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুনে?সা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এর আগে কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত ছিল। ২০১৭ সালে যখন সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল, তখন অনেকেই সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। সঙ্গত কারণেই প্রশ? আসে যে সেইসময় কোনও আপত্তিতে কর্ণপাত না করে সাত কলেজকে ঢাবি’র অধীনে কেন নিয়ে আসা হয়েছিল?

সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ, বলছেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা তো হয়-ই নি; বরং তাদের কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষ-গবেষণাগার, কোনোটাই নেই। চালু হয়নি সেমিস্টার পদ্ধতি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স?াতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, তাঁদের প্রথম দাবি সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। সাত কলেজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে প্রশাসনিক ভবনের ব্যবস্থা করতে হবে; যেখানে সাত কলেজের জন্য আলাদা সহ উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন।

‘সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় র?পান্তর টিম’-এর অন্যতম মুখপাত্র ও কবি নজরুল সরকারি কলেজে স?াতকোত্তরের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী বলেন, দীর্ঘ সাত বছর ধরে আমরা শিক্ষা বৈষম্যের শিকার। অবকাঠামাগত কোনও সমস্যা নিয়ে আমরা শিক্ষকদের কাছে গেলে তারা আমাদের পাঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তারা বলে, তোমাদের অভিভাবক আমরা না। আমরা পরিচয়হীনতায় ভুগছি। আমাদের অভিভাবক কে, আমরা জানি না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়ও দিতে পারি না, কারণ আমরা ন্যাশনালেরও স্টুডেন্ট না। জাকারিয়া বারী আরও বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা চার বছর পড়াশুনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের যে সার্টিফিকেট দেয়, সেই সার্টিফিকেটে ভিন? ফন্টে এফিলিয়েটেড লেখা থাকে। চাকরির বাজারে এই শব্দটা আমাদের পিছিয়ে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে চাওয়ার বিষয়টা এতদিন মন্তস্তাত্ত্বিক ছিল। এত বছর ধরে আমরা তো কেবল সংস্কার চেয়েছি। সংস্কারের জন্য নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগে আন্দোলন করেছি। গুলি খেয়েছি। এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়াতে আমরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চাচ্ছি।’ সাত কলেজের শিক্ষা ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে গত ২৪ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (কলেজ) সভাপতি করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের সেই এক দাবি কমিশন গঠন। এর ব্যাখ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, এরকম কমিটি ২০১৮ সালেও দেওয়া হয়েছিলো। তখন সংস্কারের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সাথে প্রহসন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ মনে করেন, কমিটি বা কমিশনে শাব্দিক পার্থক্য ছাড়া আর কোনও তফাৎ নেই। যে বিষয়ে তারা (শিক্ষার্থী) কমিশন গঠন করতে চাচ্ছে, সেই বিষয়টিই যদি কমিটি অ্যাড্রেস করতে পারে, তাহলেই তো হলো। সেটিকে আপনি কমিশন বলেন কিংবা কমিটি। আন্দোলনকে সামনে রেখেই তো তারা কাজ করছে প্রয়োজনে তারা ছাত্রদের সাথে অবশ্যই আলাপ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী বলেন, সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ ছিল। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ম্যানপাওয়ার, লজিস্টিকস, কারিকুলাম সব অক্সফোর্ডের আদলে করা। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেট-আপ তার সাথে কোনোভাবেই যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন?াহ বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন? সময় দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামলেও এখনকার ‘বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবিটি একেবারেই নতুন। আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের কনটেক্সটে শুধু সাতটি কলেজকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা, বাস্তবে র?প দেওয়া, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম কীভাবে চলবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া...কঠিন। আবার শুধু সাত কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, সেটিও একটি চিন্তার কারণ। মোহাম্মদ আলী জিন?াহর মতে, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলোর অবকাঠামোই ঠিক হয়নি। কোথাও কোথাও শিক্ষক কম। উপাচার্য নাই। ওইটার সাথে তুলনা করলে শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক, সেটি কর্তৃপক্ষ ভালো বুঝবেন; তারাই সিদ্ধান্ত নিবেন যে কতটা মানা সম্ভব। কিন্তু এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার। কারণ এই কলেজগুলোতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি, তাদের যথাসময়ে বের হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে।