পতিত স্বৈরাচারের দোসররা দেশে-বিদেশে এখনো সক্রিয় জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত র্যালিপূর্ব সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুর ১২টা থেকে নয়াপল্টনে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্ত এবং ঢাকার বাইরে থেকেও মিছিলযোগে র্যালিতে যোগ দেন বিএনপির অনুসারীরা। র্যালিতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা সেলিম রেজা কোরআন তেলাওয়াত করেন। এ সময় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া করা হয়। এছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, তার ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর নাজাত কামনা করে দোয়া করা হয়। র্যালিপূর্ব সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, আগেও বলেছি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার রাজপথে লাখো জনতার এই মিছিল, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ৭ নভেম্বরের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় দীক্ষিত করার মিছিল। লাখো জনতার আজকের এই মিছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা এবং হাজারো শহীদের স্বপ্নে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের মিছিল। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি জেনে রাখুক আজ, রাজধানীর রাজপথের আজকের এই সমাবেশ-মিছিল, কারও বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য নয়, বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার মিছিল। দেশের, নিজের অধিকার রক্ষার মিছিল, নিজের ভোট প্রয়োগের অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিল।
‘আমি নিজেও সতর্ক’ এমন মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, কখনো যেন বাংলাদেশে ফ্যসিবাদ ফিরে আসতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি নাগরিকের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জনগণের ভোটের প্রতি যতক্ষণ পর্যন্ত মুখাপেক্ষি করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এমনকি স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশেও স্বল্প আয়ের মানুষকে বাজার সিন্ডিকেটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। যদি না মানুষের সরাসরি ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারি। ‘স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের’ উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আমি একটি বিষয়ে স্মরণ করিয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানাতে চাই, আমি নিজেও সতর্ক থাকতে চাই- সেটি হলো গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো কিন্তু থেমে নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা দেশে-বিদেশে, প্রশাসনে, এখনো সক্রিয়। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তবে নিজেদের সতর্ক করতে চাইলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এটিই আজ জনগণের চাওয়া। ‘লক্ষ জনতার এই মিছিলকে কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেয়া যাবে না।’ এই প্রত্যাশা ও সাফল্য কামনা করে র্যালির উদ্বোধন ঘোষণা করেন তারেক রহমান।
এ সময় অস্থায়ী মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর মির্জা ফখরুলসহ মঞ্চে থাকা নেতারা তাকে সালাম দেন। এরপর র্যালি শুরু হয়। র্যালিটি জাতীয় সংসদের দক্ষিণ গেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
র্যালিতে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু. প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষকদল সভাপতি হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ। এর আগে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় এসে সমবেত হন। এছাড়াও ঢাকা, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেত হন। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট, টুপি, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ঢাকঢোল ও ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে র্যালিতে অংশ নেন। র্যালিটি নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে শুরু করে নাইটিঙ্গেল, কাকরাইল মোড় হয়ে মৎস্যভবন মোড় ঘুরে শাহবাগ, ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।