বাংলাদেশ ভারতের আদানি পাওয়ারকে আরো ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার (প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা) পরিশোধ করছে। এই অর্থটি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে দেয়া হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ভারতের ইকোনমিক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। কয়েকদিন আগে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ গত মাসে ৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে। চলতি মাসে আরো ১৭ কোটি ডলার পরিশোধের জন্য একটি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আদানি পাওয়ারের বকেয়া শোধ করতে ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের একটি ঋণপত্র খুলেছে। এই এলসি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ভারতের আইসিআইসিআই ব্যাংকে খোলা হয়েছে এবং এটি পিডিবির পক্ষ থেকে আদানি পাওয়ারকে দেওয়া তৃতীয় এলসি।
২০১৫ সালে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বাংলাদেশ এবং আদানি পাওয়ারের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয়, যার অধীনে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। গোড্ডায় আদানি পাওয়ারের দুটি ইউনিট রয়েছে, প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৮০০ মেগাওয়াট। এই দুটি ইউনিটের পুরো বিদ্যুৎ (১৬০০ মেগাওয়াট) বাংলাদেশে রফতানি করা হয়, যা দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করে। তবে সম্প্রতি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর, বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগেই কয়লার দাম নিয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হয়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কয়লার চড়া দাম দিতে অস্বীকৃতি জানায়, কিন্তু পরে আদানি দাম কমাতে রাজি হয় এবং পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় কম দামে কয়লা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে এক বছর পর, আদানি আবারও বাড়তি দাম চাইছে। এটি জানা গেছে, গত জুলাই থেকে আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম পায়রা কেন্দ্রের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি ধরে বিল করছে এবং বকেয়া বিলের ওপর ১৫ শতাংশ হারে সুদও আরোপ করছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশকে নিয়মিত চাপ দিয়ে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে বলছে।
৩১ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ না করার কারণে আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেয়। এরপর, আদানি কর্তৃপক্ষ ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। যদি এরপরও বিল পরিশোধ না হয়, তবে তারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়। আদানির হিসাব অনুযায়ী, কয়লার বাড়তি দাম এবং বকেয়া বিলের সুদসহ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে তাদের ৮৫ কোটি ডলার (৮৫০ মিলিয়ন ডলার) বা প্রায় ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তবে পিডিবি দাবি করছে, আদানির বকেয়া বিলের পরিমাণ ৭০ কোটি ডলার (৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা)। এই বকেয়া বিলের বড় অংশই শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে জমা হয়েছে, কারণ আগের সরকার প্রায় ৮০ কোটি ডলার বকেয়া রেখে গিয়েছিল।