গণ আন্দোলনের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিতে আজ রোববার রাজপথে নামার ঘোষণা সামাজিক মাধ্যমে দিচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে গতকাল শনিবার প্রেস সচিব এক ফেইসবুক পোস্টে প্রেস আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, বিক্ষোভ মিছিল বা জমায়েত কর্মসূচির বিপরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কঠোর অবস্থানে নেবে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রথম রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল রোববার বিকাল ৩টায় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নেতাকর্মীদের জড়ো হয়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছে টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ক্ষমতাচ্যুত দলটি। ফেইসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের প্রতিবাদ দেশের মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে; আমাদের প্রতিবাদ মৌলবাদী শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে; আমাদের প্রতিবাদ সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রাকে ব্যাহত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে।’ ‘অপশাসনের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে সবাইকে অংশগ্রহণ করারও আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন একটি ‘ফ্যাসিবাদী’ দল। এই ‘ফ্যাসিবাদী’ দলটির বাংলাদেশে প্রতিবাদ করার মতো কোনো সুযোগ নেই। ‘গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক’ শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ সভা, সমাবেশ ও মিছিলের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড অন্তর্বর্তী সরকার বরদাশত করবে না।’
তার বক্তব্যের সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নিবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’ গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিনেই শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে উড়ে যান। সেদিনই দলটির কেন্দ্রীয়, ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা কার্যালয়ে হামলা করে লুটের পর আগুন দেয়া হয়। সেদিন থেকেই দলটির শীর্ষস্থানীয় থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে। গোপালগঞ্জ ছাড়া অল্প দুই একটি জেলায় মিছিল হয়েছে। ঢাকায় গভীর রাতে বা ভোটে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিল দেখা গেছে। শহীদ নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগ আসলে কী করবে- এই প্রশ্নে দলের একজন জ্যেষ্ঠ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, নূর হোসেন দিবস আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে পালন করে আসছে। এই দিনটি উপলক্ষে আমাদের নতুন করে কর্মসূচি দেয়ার কিছু নেই। দেশের সকল রাজনৈতিক দল পালন করে, আমরাও পালন করে আসছি। আগামীকাল ১০ নভেম্বর আমরা নূর হোসেন চত্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন করব। একই কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি। তিনি বলেন, শহীদ নূর হোসেন দিবস শুধু আওয়ামী লীগ একা পালন করে বিষয়টা তা নয়, এটা দেশের সকল রাজনৈতিক দল পালন করে আসছে। আমরাও প্রতি বছরের ন্যায় দিনটিকে স্মরণ করব, শ্রদ্ধা নিবেদন করব। এখানে আমাদের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের হুঁশিয়ারির বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো জাতীয় একটা দিবস, এই দিবসটি পালন করতে কেন দিবে না, এটা কোনো কথা হতে পারে না। সরকার এটা হতে দেবে না, ওটা করতে দেবে না, এটা কোন ধরনের কথা? নূর হোসেন দিবস তো আওয়ামী লীগের একার না। এটা বিএনপিও পালন করে, সকল রাজনৈতিক দল পালন করে। আমরাও বিকাল ৩টায় শ্রদ্ধা নিবেদন করব।
সূত্র : বিডি নিউজ