আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’। গতকাল রোববার তারা এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্প্রচার করেছে। সংবাদে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ক্র্যাক্স ডাউন অন ট্রাম্প সাপোর্টার্স আফটার হি ডিক্রাইস এন্টি-মায়নোরিটি অ্যাটাকস (সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দা জানানোর পর বাংলাদেশে ট্রাম্পের সমর্থকদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে)।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত এই পরিকল্পনাটি ছিল দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি সম্প্রতি তার নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভারত থেকে শেখ হাসিনা তার নেতাকর্মীদের নতুন একটি বিক্ষোভের নির্দেশনা দেয়ার কলরেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। এতে তিনি নেতাকর্মীদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবিসহ প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করতে বলেন। যদি তারা বাধাপ্রাপ্ত হয় সেগুলোর ছবি-ভিডিও তুলে তাকে পাঠাতে বলেছেন। তিনি সেটা ট্রাম্পকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন। নির্দেশনা মেনে আওয়ামী লীগের কর্মীরা গত শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতে মিছিলের প্রস্তুতি নেয়। এসময় মোট ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ পরিবেশন করেছে ইন্ডিয়া টুডে। সংবাদ মাধ্যমটি দাবি করেছে, শুক্রবার রাত থেকেই বাংলাদেশে ট্রাম্প সমর্থকদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের ধরতে যৌথবাহিনী বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছে।
পুরো ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, মিছিলটি ছিল নূর হোসেন দিবসের নামে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ফিরে আসার চেষ্টা। ভারতের গণমাধ্যমের এই প্রতিবেদন পূর্বপরিকল্পিত। শেখ হাসিনার নির্দেশে ও বিনিয়োগে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে এটা স্পষ্ট যে, ট্রাম্পকে দেখানোর জন্যই আওয়ামী লীগের কর্মীরা তার ছবি নিয়ে মাঠে নেমেছিল। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কামনা করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভারতীয় মিডিয়া এমন প্রতিবেদন প্রচার করেছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান জানান, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে তার দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ছবি ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ব্যবহার করে অবৈধ মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে সেই ছবি ও প্ল্যাকার্ড ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেগুলো ভাঙচুর ও অবমাননার ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক বিনষ্টের অপচেষ্টার অংশ হিসেবে তারা এ অপতৎপরতার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বলেন, গত শনিবার ও গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এ পর্যন্ত এই কুচক্রী মহলের ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ উসকানিমূলক পোস্টার, ছবিসহ প্ল্যাকার্ড ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।