অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ছাত্র-জনতা আমাদের কিছু দায়িত্ব দিয়েছে এবং আমরা সেটা যথাসম্ভব পালন করার চেষ্টা করছি। আমাদের কারো ব্যক্তিগত এজেন্ডা নেই; আমাদের একমাত্র এজেন্ডা হচ্ছে দেশের স্বার্থ। গতকাল সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে বণিক বার্তা আয়োজিত তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের বিষয় ছিল বৈষম্য, আর্থিক অপরাধ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাময়। তিনি আরো বলেন, যা কিছু করা হচ্ছে, তা দেশের স্বার্থেই করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো সরকার এসে সেই কাজগুলো চালিয়ে নিতে পারবে। উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা কাজগুলো তিনটি ধাপে ভাগ করেছি স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি কাজ। আমরা হয়তো মধ্যমেয়াদি কাজ শুরু করতে পারব, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কাজগুলো পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারগুলো করবে। তবে আমরা কিছু কিছু দীর্ঘমেয়াদি কাজও করতে চেষ্টা করব। দেশের অর্থনীতির উন্নতির জন্য যেসব গবেষণা হয়েছে, সেগুলো দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং, রেভিনিউ এবং অন্যান্য রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নিচ্ছি, তবে এর মানে এই নয় যে, টেকসই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না। আমরা যা করছি, তা জনগণকে বোঝানোর মাধ্যমে করা হচ্ছে। দেশে বৈষম্যের দুটি ধরন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি বৈষম্য চোখে দেখা যায় না, অন্যটি দেখা যায়। আরেকটি হচ্ছে আয় ও সম্পদের বৈষম্য, যেখানে কখনো সম্পদের বৈষম্য আয়ের চেয়েও বেশি প্রকট। গরিব মানুষের সুযোগের বৈষম্যের কথা তুলে ধরে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, গ্রামের অনেক মানুষ জানেন না সরকারি সুযোগ-সুবিধা কোথায় পাওয়া যাবে, এবং তারা সুযোগের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। গরিব মানুষকে শুধুমাত্র ভিটামিন এ ক্যাপসুল বা কলেরার টিকা দিলেই যথেষ্ট নয়। তার মরণব্যাধী রোগের চিকিৎসা কোথায় হবে, সেটা স্পষ্ট নয়। তাকে তার জমিজমা বিক্রি করে ঢাকা আসতে হয়। আর শিক্ষা খাতে অনেক সময় তারা গুণগত শিক্ষা পান না। প্রতিষ্ঠান দুর্বল বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে যোগ্য পরিচালকের অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে গেছে। এগুলো সঠিক সময়ে ভালো লোক দিয়ে পরিচালিত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই প্রফেশনাল জায়গায় নন-প্রফেশনাল বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সিস্টেমগুলো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অটোমেটেড হয়নি। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বলা হলেও বাস্তবে আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি। তাই এসব বিষয়ে আরো গুরুত্ব দিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। অর্থনৈতিক সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং।