কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে চার দিনের সরকারি সফরে অবস্থান করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় জলবায়ু সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।
এর আগে গতকাল জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা সাক্ষাৎ করেছেন। এসময় তারা জলবায়ু সংকট সমাধানের উপায় এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল তাইয়েব। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জুলাই মাসে ছাত্রদের সংহতি ৫৭ বাংলাদেশিকে মুক্তি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, নেপালের প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌদেলের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এসময় অধ্যাপক ইউনূস সার্কের পুনরুজ্জীবনে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা আরও যাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, তাদের মধ্যে আছেন- বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু, ঘানার প্রেসিডেন্ট ন্যানা কুফো-আদো, বসনিয়ার প্রেসিডেন্ট ডেনিস বেচিরভিচ, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদি রামা, মন্টিনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট জ্যাকব মিলাটভিচ, বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটলি, ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জিরাওদো আউখহিম, ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট শিনা আনসারি, ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসায় আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে এবং উন্নতি করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল তাইয়েব। গতকাল বাকুর একটি হোটেলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় প্রধান উপদেষ্টাকে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান গ্র্যান্ড ইমাম তাইয়েব। তিনি গ্র্যান্ড ইমামকে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ সশরীরে ঘুরে দেখার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আশাবাদী। আপনি একজন বিচক্ষণ মানুষ। বিপ্লবের পর বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। আমি আপনাকে বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করার জন্য স্যালুট জানাই। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল ফান্ডেন্ড স্কলারশিপ ঘোষণা করবে বলেও জানান তিনি। অধ্যাপক ইউনূস এসময় বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের দেয়ালচিত্রের সংকলন ‘দ্য আর্ট অফ ট্রায়াম্ফ’ উপহার দেন গ্র্যান্ড ইমামকে।
জানা গেছে, এই সফরে প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু সম্মেলনের বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য দেবেন এবং সেখানে অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, জলবায়ু সম্মেলনের সাইডলাইনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টসহ ২০ জন বিশ্বনেতার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা সাক্ষাৎ করেছেন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ায় তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানান। অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ড. ইউনূসকে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এবং চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ড. ইউনূস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিককে মুক্তি দেয়ায় প্রধান উপদেষ্টা আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে ধন্যবাদ জানান।
গতকাল মঙ্গলবার জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা বিশ্বনেতাদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আড্ডো, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার প্রেসিডেন্ট ডেনিস বেচিরোভিচ রয়েছেন। এ ছাড়া তিনি বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটলি, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইদি রামা, লিখটেনস্টাইনের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিয়েল রিশ, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে ও ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট শিনা আনসারির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। উল্লেখ্য, গত ১১ নভেম্বর কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয়েছে, চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট সমাধানের লক্ষ্যে এবারের সম্মেলনে প্রায় ২০০ দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতারা একত্র হয়েছেন। এবারের সম্মেলনের মূল লক্ষ্য জলবায়ু সংকটের ভুক্তভোগী দরিদ্র দেশগুলোকে আরও অর্থসহায়তা দেয়ার পথ খুঁজে বের করা।