ঢাকা ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গোলটেবিল বৈঠক

সংস্কারের ধারাবাহিকতা চলমান রাখতে হবে : সুজন

সংস্কারের ধারাবাহিকতা চলমান রাখতে হবে : সুজন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ শাসনের অবসানের পরে জনগণের মনে রাষ্ট্র সংস্কারের যে গভীর আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, সেই সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সংস্কারকাজটি সুসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। সেই রাষ্ট্র সংস্কার যেন পরবর্তী সময়ে কার্যকর করা হয়, সেজন্য সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি সমঝোতা থাকতে হবে। এরপরই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে এক গোলটেবিল বৈঠকে মন্তব্য করেছেন নাগরিক সমাজের নেতারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সহায়তায় ‘ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম: রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এই গোলটেবিলে সভাপতিত্ব করেন সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক বিচারপতি এমএ মতিন। গোলটেবিল আলোচনায় সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করে সুজন। প্রস্তাবে বলা হয়, নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ প্রশাসন সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। এছাড়া পরে আরও চারটি কমিশন গঠন করা হলেও প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়নি। আগের ছয়টি কমিশনকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য তাদের সুপারিশের প্রতিবেদন প্রদান করতে বলা হয়েছে। এরপর সরকার সেই সুপারিশের ওপরে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের উদ্যোগ নেবে এমন বলা হয়েছে। গোলটেবিল সঞ্চালনা ও সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার। সুজনের আলোচকরা বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারে বেশ ক’টি বিষয় সামনে উঠে এসেছে। তার মধ্যে অনেক বিষয় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। আবার কিছু বিষয়ের সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারভুক্ত কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে মোটের উপর কথা হলো সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, নির্বাচনের আগে যেমন সংস্কার প্রয়োজন, নির্বাচনের পরেও তা চলমান রাখতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, দেশে একটি পরিবর্তন আনার জন্য আবু সাঈদ, মুগ্ধর মতো সূর্যসন্তানরা প্রাণ দিয়েছেন। বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। ফলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেই হবে।

একটা সত্যিকারের পরিবর্তন বা সংস্কার আনতে হবে। এ জন্য যে সংস্কার প্রস্তাব গৃহীত হবে, তা কার্যকর করার জন্য যারা নির্বাচনে বিজয়ী হবেন, তাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে, যারা বিরোধীদলে যাবেন, তাদেরও পূর্ণ সমর্থন থাকতে হবে। এজন্য একটি ‘জাতীয় সনদ’ করা যেতে পারে, যেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন।

সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনেই নয়ছয় করার কোনো সুযোগ থাকা চলবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, নাগরিকের নিজেদের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত হলে, রাজনীতিকরাও অনেক দায়িত্বশীল হবেন। তিনি বলেন, আদর্শিক বা কর্মপন্থা নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা থাকতেই পারে, তবে মৌলিক বিষয়গুলোতে সব রাজনৈতিক দলের সমঝোতা থাকতে হবে। তা না হলে সংস্কারচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। সাংবাদিক ও কবি প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, সংস্কার প্রস্তাব আসার অপেক্ষায় না থেকে নির্বাহী আদেশে যেসব পরিবর্তন করা যায়, সরকার সেই পরিবর্তনগুলো করতে পারে। বলা হয়ে থাকে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে চারটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো সুষ্ঠু ছিল কিন্তু নির্বাচন যা-ই হোক, সুষ্ঠু গণতন্ত্র ছিল না। এ বিষয়ে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরি সচেতন নয়। রাজনৈতিক দলের ভেতরেও সংস্কার করতে হবে। সাংবাদিক মাহাবুব কামাল বলেন, বাংলাদেশের যে সমস্যা, তার স্বল্প ও মধ্য মেয়াদের কোনো সমাধান নেই। এ জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া প্রয়োজন। জনসাধারণের মনোজগতের পরিবর্তন আনতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি জনসংস্কৃতির পরিবর্তনের জন্যও কাজ করতে হবে।

জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি সরকারপ্রধান না হওয়া, একই ব্যক্তির সরকার ও দলীয় প্রধান না হওয়া, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য এসএম শফিকুল ইসলাম, একরাম হোসেনসহ সুজনের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত