ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে অগ্রগতি করছে
অর্থ উপদেষ্টা
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সীমাবদ্ধতা থাকলেও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে সরকার খুশি। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে সরকার খুশি যদিও সেখানে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস বা ১০০ দিন পূর্ণ হওয়ার উপলক্ষে সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে বাসসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে অর্থ উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকের সময় ডা. সালেহউদ্দিন বলেন, তিনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএসডিবি ও ওপেক ফান্ডের উচ্চপদস্থদের সাথে কথা বলেছেন এবং তারা সবাই সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। উপদেষ্টা বলেন, আমানতের চেয়ে বেশি দায়ের মতো বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংক নাজুক অবস্থায় রয়েছে এবং এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করেছে এবং সরকার ‘চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার আইন’ প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে, তবে সম্পদ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নির্দিষ্ট সময় নেবে। তিনি বলেন, শক্তিশালী ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ভঙ্গুর ব্যাংকগুলোকে বাঁচানো একটি টেকসই ব্যবস্থা নয় এবং একটি স্থায়ী সমাধানও নয়। কারণ সেই শক্তিশালী ব্যাংকগুলোকেও কার্যকর হতে হবে। কিভাবে খারাপ সম্পদ বিক্রি করা যায়, সে সম্পর্কেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিকল্পনা করছে এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সর্বোত্তম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দীর্ঘ সময় টিকিয়ে রাখা কিছুটা কঠিন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ গঠনের চেষ্টা করছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসএমই খাত বিশেষ অর্থায়ন পেলে ব্যাংকগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আবার ফিরে আসবে এবং এভাবে আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পাবে। গত মাসে ওয়াশিংটনে অবস্থানের সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, তিনি ঋণদাতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন এবং অন্যদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। কারণ তারা ব্যাংকিং খাতে আরো শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, খারাপ ব্যাংকগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া ও নিম্নমুখী ব্যাংকগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আর এভাবেই গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
অর্থ পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার এরই মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। আইএমএফ, ইউএস ট্রেজারি ও যুক্তরাজ্যের মতো ঋণদাতারা আশ্বস্ত করেছে যে তারা বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য তাদের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের পাঠাতে পারে। তিনি বলেন, সরকার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইটিএফসি) পাশাপাশি সার আমদানিসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বেশিরভাগ বকেয়া পরিশোধ করেছে। সরকারি ক্রয় কমিটিতে ক্রয় প্রস্তাবগুলো বকেয়া হিসেবে থাকে না। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘রিজার্ভ এখন একটি সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য আমি প্রবাসী বাংলাদেশীদের ধন্যবাদ জানাব। রফতানিকারকরা এখন কর প্রণোদনা পাচ্ছেন, তাই রফতানি আয় কিছুটা কম হচ্ছে।’ আদানি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, আগের সরকার নিয়মিত বকেয়া পরিশোধ করেনি। অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে বকেয়া পেয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, এখন আদানি পাওয়ারকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে সরকার অবশিষ্ট বকেয়া পরিশোধ করবে। তিনি বলেন, ‘দাতাদের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি শতভাগ, অন্যথায় তারা বেশি সংখ্যায় আসবে না। সরকার তাদের আশ্বস্ত করেছে যে বাংলাদেশ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো খেলাপি হবে না।’ বৈদেশিক ঋণের বোঝা ও প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সরকার পূর্ববর্তী শাসনামল থেকে আইটিএফসি ও আদানি পাওয়ারের অনেক বকেয়া উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। তিনি বলেন, এ ছাড়া নতুন আমদানি খরচও বাড়িয়ে দেবে।
অবশ্যই আমাদের ওপর চাপ বাড়ছে ... দেশের ঋণের সাথে জিডিপি অনুপাত প্রায় ৩৮%, যা গ্রিস, ইতালি এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও বেশি। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাঁধে বোঝা চাপাতে চাই না। ঋণের স্থায়িত্ব দেখে আমরা ঋণদাতাদের কাছে অনুরোধ করেছি। আমরা বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে আরো সহায়তার পাশাপাশি আইএমএফের কাছে তিন বিলিয়ন ডলার চেয়েছি এবং তারা আমাদের সাহায্য করবে আর সেই ঋণ পরিশোধ করার মতো সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’ উপদেষ্টা বলেন, সরকার যদি এফডিআই ও এফপিআই বাড়াতে পারে, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো বাড়বে। সূত্র : বাসস