ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংবিধান সংস্কার নিয়ে মতামতের স্তূপ

সংবিধান সংস্কার নিয়ে মতামতের স্তূপ

সংবিধান সংস্কার নিয়ে মতামতের স্তূপ পরে গিয়েছে। নানা পেশার মানুষের মধ্যে বিশিষ্টজন ও বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন মত দিয়েছেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা, উভয় কক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রেখে এর নির্বাচন পদ্ধতি ও প্রতিনিধিত্ব সুনির্দিষ্টকরণ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এর বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। তবে সব থেকে বেশি আলোচনায় এসেছে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনার পরামর্শ দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেন বিশিষ্টজনরা।

এ সময় সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিধানের কঠোর বিরোধিতার পাশাপাশি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ না দেয়া এবং জাতীয় পতাকা ও জাতীয়সংগীত পরিবর্তন না করার দাবি জানান অনেকে। সংবিধানে জাতির পিতা হিসেবে শুধু একজনকে স্বীকৃতি না দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি যৌথভাবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নাম সংযুক্ত করার প্রস্তাবও করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি এবং দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকার বিধান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন কেউ কেউ। বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এসব মূলনীতি পরিবর্তন করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের কথা সন্নিবেশিত করা, নারী অধিকার সুনিশ্চিত করা, সংবিধানে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পরামর্শ এসেছে অনেকের কাছ থেকে। সংবিধান সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন গত সোমবার মতবিনিময় শুরু করে। জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে প্রথম দিনের সভায় অংশ নেন ১৬টি সংগঠনের ৩১ জন প্রতিনিধি। গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের সভায় যোগ দেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ, বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মুসা আল হাফিজ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ড. শহিদুল আলম এবং মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি।

গত বুধবার তৃতীয় দিনের সভায় অংশ নেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ডা. জাহেদ উর রহমান, দিলীপ কুমার সরকার, মুফতি সাইফুল ইসলাম এবং মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম। এ ছাড়া কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন সংগঠন সংবিধান সংস্কার বিষয়ে লিখিত প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। বিশিষ্টজনও লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন। কেউ কেউ দ্রুতই নিজ নিজ প্রস্তাবনা লিখিত আকারে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার মতবিনীময় সভায় বেশ কিছু গুরুত্ব পূর্ণ প্রস্তাব আসে।

বৈঠকে অংশ নেয়া বিশিষ্টজন ও বিভিন্ন সংগঠন প্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি করা হলেও এর বিরোধিতা করেছেন সভায় অংশ নেয়া অনেকে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, নতুন সংবিধান প্রণয়ন তথা সংবিধান পুনর্লিখন বাস্তবসম্মত কারণে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।

আবার কিছু সংস্কার নির্বাচিত সংসদ ছাড়া করা যাবে না। কাজেই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে তাদের পরামর্শগুলো প্রস্তাব আকারে দিয়ে সেগুলো বাস্তবায়নের কাজ পরবর্তী সরকার ও সংসদের হাতে ছেড়ে দেয়া। অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বর্তমান সময়েও সংবিধানের চার মূলনীতির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি সংবিধানে বর্ণিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরিচয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ নাকি ‘জনগণতান্ত্রিক’ হবে, সেটা সুনির্দিষ্ট করার দাবি তোলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত