বেড়েছে মূল্যস্ফীতি

কারা পায় শুল্ক ছাড়ের সুবিধা

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও মূল্যস্ফীতির চাপ কমছে না, বরং বাড়ছে। অক্টোবরে গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় মূল্যস্ফীতি কমছে না। এদিকে, শুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চাপে পড়ছে নির্দিষ্ট এবং নিম্ন আয়ের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ গত বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাজারে এতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ বলছে দাম কমছে না, অথচ এনবিআর অনেক সুবিধা দিয়েছে। ট্যাক্স কমিয়ে দেয়া হয়েছে, তারপরও নিত্যপণ্যের দাম কমে না। মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে আরো আট মাস লাগবে।

মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি : বিবিএসের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.৮৭ শতাংশ হয়েছে। খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে চাল ও সবজির দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর অক্টোবরের মূল্যস্ফীতি গত তিন মাসের মধ্যে এটা সর্বোচ্চ। এর আগে সেপ্টেম্বরে সামগ্রিক ৯.৯২ শতাংশ ও আগস্টে ছিল ১০.৪৯ শতাংশ। বিবিএস বলছে, অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৬৬ শতাংশে, যা জুলাইয়ে ছিল ১০.৪০ শতাংশ। অক্টোবরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯.৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা এক মাস আগে ছিল ৯.৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ প্রায় দুই বছর ধরে ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের ওপরে আছে। আর গত বছরের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯.৯৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৯.৯২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন তারা দায়িত্ব নেয়ার আগে মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়ন্ত্রিত ছিল। কৃত্রিমভাবে দেয়া হতো হিসাব। বর্তমান সরকার মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হিসাব দিচ্ছে।

সরকারের উদ্যোগ : মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার এরইমধ্যে পেঁয়াজ ও ডিমসহ আরো কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু বাজারে তার প্রভাব নেই। দুই অংকে পৌঁছে যাওয়া মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতে সরকার আমদানি পর্যায়ে চালের পাশাপাশি পেঁয়াজ, আলু আর ভোজ্যতেলের শুল্ক কমিয়েছে। গত এক মাসে আলুর দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা, পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।

আর বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) মার্জিন তুলে দিয়েছে। তুলে দেয়া হয়েছে সিঙ্গেল বরোয়ার (ব্যক্তির একক ঋণ) লিমিট। বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদ (রেপো) হার। অক্টোবরে রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। বেড়েছে প্রবাসী আয়। ফলে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু তারপরও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।

কেন এই পরিস্থিতি? : যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নুরুল আমীন বলেন, এলসি মার্জিন তুলে দেয়ায় আমদানি বাড়বে এবং সহজ হবে। কারণ এলসি খুলতে এখন আর আগের মতো এককালীন অর্থ লাগবে না। কয়েক পর্যায়ে শোধ করা যাবে। আর ব্যক্তি ঋণ সীমা তুলে দেয়ায় ব্যবসায়ীরা বেশি ঋণ পাবেন। অন্যদিকে নীতি সুদ হার বাড়ানোয় ব্যাংক কম টাকা ঋণ করবে। এগুলো মূল্যস্ফীতি কমানোর ব্যাকিং টুলস। কিন্তু এগুলো বাংলাদেশে কাজ করে না। কারণ এখানে বাজারের হিসাব আলাদা।

তিনি বলেন, আসলে বাজারে এখনো সিন্ডিকেট আছে। পণ্য থাকার পরও সরবরাহ চেইনে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়।