তাপমাত্রা কমে বাড়ছে শীত

কুয়াশায় ঢাকা উত্তরাঞ্চল

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর

শীত বাড়তে শুরু করেছে উত্তরাঞ্চলে। হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরের জেলাগুলোতে শীত পড়ে আগেভাগেই। গত দুই-তিন দিন ধরে ভোর থেকে সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে বেড়েছে কুয়াশা।

রংপুর : অঞ্চলের তাপমাত্রা প্রতিদিনই কমছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা রংপুর অঞ্চলের রাস্তাঘাট মাঠ প্রান্তর। দিনের বেলা অধিকাংশ সময় সূর্যের আলো দেখা গেলেও তাপমাত্রা খুবই কম। রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গতকাল শনিবার রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিলো। এর আগে, সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ এবং ৯টায় ৯৬ শতাংশ। গত শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৮ এবং গত বৃহস্পতিবার এই তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, ক্রমেই এই তাপমাত্রা কমবে। শীতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকেও রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে বাস মিনিবাস মোটরসাইকেল অটোরিকশাসহ যানবাহন চলতে দেখা গেছে। শীতের কাপড় ছাড়া কেউই বের হননি বাইরে।

পঞ্চগড় : গতকাল ভোর ৬টায় ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। গত শুক্রবার রেকর্ড হয়েছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েকদিন ধরেই ১৬ থেকে ১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ। নবান্নের আয়োজনে কৃষকরা শিশির মাড়িয়ে ছুটছেন মাঠে। এ সময়ে ক্ষেতে ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। পাথর, চা-শ্রমিক, ভ্যানচালক জীবিকার তাগিদে কাজে বের হয়েছেন। অনেকে কুয়াশার সকালে পুকুরে বরশিতে মাছ ধরতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, দিন দিন শীতের মাত্রা অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে শীত লাগতে শুরু করেছে। শীতের হালকা গরম কাপড় বের করতে হয়েছ। মাঝরাত থেকেই শীত অনুভব হতে থাকে। টিনের চালে টিপটিপ করে শিশির পড়তে শোনা যায়। ভোর পর্যন্ত গায়ে কম্বল ও কাঁথা নিতে হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তরের জেলাটি বরফের পাহাড় হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার বিধৌত এলাকা হওয়ায় উত্তরের এ জেলায় অন্যান্য জেলার আগেই এ অঞ্চলে শীতের আগমন ঘটে। এখনো সেভাবে শীত না পড়ায় দিনে গরম ও রাতে হালকা শীতের কারণে বেড়েছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পঞ্চগড়ের প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, শীত পড়ে গেছে। ভোর থেকে সকাল কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত রোববার রেকর্ড হয়েছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন দিন যত যাবে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।

দিনাজপুর : অগ্রহায়ণের প্রথম দিনেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে দিনাজপুর। ঘরের চালে টিপটিপ বৃষ্টির মতো পড়ছে হিম কণা। সূর্যের আলো সবুজ ঘাসে পড়লে শিশির বিন্দু মুক্তার কণায় রূপ নিয়েছে। ঘর থেকে কাজের সন্ধানে বের হওয়া মানুষ গায়ে জড়িয়েছেন মোটা জামা কাপড়। এভাবেই শীত আবহ জমে উঠছে উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চলটিতে।

গতকাল সকালে দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর দেশের সর্বনিমম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছীতে। সকাল সকাল নিজের ইজিবাইক নিয়ে বের হয়েছেন সদর উপজেলার ফরিদপুর এলাকার ফাতাহুর রহমান। গায়ে জড়িয়েছেন মোটা কাপড়। দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকালে দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ এবং বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় দুই কিলোমিটার। নভেম্বর মাসজুড়ে তাপমাত্রা কমতে থাকবে। ডিসেম্বরে দিনাজপুরের উপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, আশ্বিন মাসে মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় থাকায় এবং উত্তরীয় বায়ুর কিছুটা প্রভাব থাকায় শেষ রাতে শীত নেমে এলে ঠান্ডা অনুভূত হয়। বিশেষ করে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর আর সক্রিয় থাকবে না। অক্টোবর থেকে উত্তরাঞ্চলে কুয়াশা পড়া শুরু হয়। এখন থেকেই উত্তরের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা কমতে থাকবে। নভেম্বরের শুরু হয়ে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে পুরোপুরি শীতের প্রভাব পড়বে।