এবার শীতেও থাকবে ডেঙ্গুর থাবা!
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আটজন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪০৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯৯৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৮ হাজার ৫৯৫ জন ডেঙ্গুরোগী। সাধারণত শীত এলেই দেশ থেকে বিদায় নেয় ডেঙ্গুর প্রভাব। আক্রান্তের সংখ্যা কম অনেকটাই। কিন্তু এ বছর অক্টোবর মাস শেষ হতে চললেও ডেঙ্গুর পরিস্থিতি অনুকূলে নেই। এমনকি আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এর প্রভাব থাকতে পারে। এমন তথ্য জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অন্য বছরের মতো নয়। সাধারণত প্রতি বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রভাব একেবারেই কমে যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম ঘটছে। আগামী দুই মাসও ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি থাকবে। এমনকি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এর প্রভাব থাকবে। ড. কবিরুল বাশার জানান, তাদের একটি গবেষণা দল মাঠ পর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব নিয়ে কাজ করেছে। সেখানে প্রায় প্রতিটি এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব ২০-এর ওপরে রয়েছে। কোথাও এমনটা দেখা দিলে ধরে নেয়া হয়, সেই এলাকায় এডিস মশাবাহিত রোগ বিশেষ করে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া হওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সম্প্রতি সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টির পানি বিভিন্ন ছোট-বড় পাত্রে কিংবা গর্তে আবারও পানি জমেছে। ফলে এসব পানিতে মা মশাগুলো ডিম পাড়বে। সেখান থেকেই এডিস মশার বিস্তার ঘটবে। ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘সমাজে যেহেতু এখনো ডেঙ্গু রোগী রয়েছে এবং এডিস মশার প্রজননেরও সময়টা বাড়ছে, এ কারণে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকবে। ডেঙ্গুরোধে দেশে যে প্রক্রিয়া চলছে, এভাবে কোনোদিনই সম্ভব নয়। এজন্য আমার প্রস্তাবিত একটি মডেল রয়েছে, যা এরই মধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত প্রস্তাবিত মডেলটি বাস্তবায়ন না হচ্ছে, ততদিন দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বেশ কষ্টসাধ্য বলা যায়।’ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের শত্রু এখন মশা। মশার কাছে আমরা হেরে যাবো? এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ২৬৮-এর বেশি হয়ে গেছে। আমরা চাই মানুষ আক্রান্ত না হোক, আক্রান্ত হলে তো আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। ডেঙ্গু হলে হাড়ভাঙা ব্যথা যেটাকে বলা হয়, তেমন শরীরে ব্যথা হয়, র্যাশ ওঠে। ডেঙ্গুর একপর্যায়ে জ্বর কমে আসে। সেসময় যদি মনে করা হয়, আমি তো ভালো হয়ে গেলাম বা চিকিৎসক ঠিকমতো খেয়াল না করে সে ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। যে কারও জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। সাধারণ জ্বর মনে করে অবহেলা না করার পরামর্শও দেন তিনি।
ডা. গোলাম ছারোয়ার বলেন, আমাদের ঢাকা শহরে মশা মারার জন্য যে কীটনাশক দেয়া হয় তা একজন কীটতত্ত্ববিদের পর্যালোচনায় দেয়া প্রয়োজন। যে কীটনাশক দিচ্ছে তা নিয়ে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কোন সময়ে কীভাবে প্রয়োগ করলে মশার বিরুদ্ধে এটি কার্যকরী হবে তা জেনে দিতে হবে। এছাড়াও সামনের দিনে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক কেনার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
সামনে হয়তো এর প্রয়োগ দেখা দিতে পারে। ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ডেঙ্গুতে নারীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে অবহেলার কারণে। জ্বর হলেও ঘরের কাজ এবং অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে নারী। দেরি করে হাসপাতালে আসছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেয়ার ফলে অনেক নারীই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।