ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রধান উপদেষ্টার শোক

কিংবদন্তি জাকারিয়া পিন্টুর চিরপ্রস্থান

কিংবদন্তি জাকারিয়া পিন্টুর চিরপ্রস্থান

বাংলাদেশের ফুটবল ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম নায়ক জাকারিয়া পিন্টু। তিনি একাধারে একজন মুক্তিযোদ্ধা, ফুটবলার, কোচ, ম্যানেজার এবং সবশেষে সংগঠক। তবে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক। দেশের ইতিহাসের অন্যতম এই মহানায়ক আর আমাদের মাঝে নেই। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) মৃত্যুবরণ করেন পিন্টু। প্রথমে তার সাবেক সতীর্থ প্রতাপ শঙ্কর হাজরা এই কিংবদন্তি মৃত্যুর খবর জানান। পরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পিন্টুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।

জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে গভির শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকারিয়া পিন্টু হাসপাতালে মারা গেছেন জানতে পেরে আমি মর্মাহত ও শোকাহত।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কিংবদন্তি অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সরকারের জন্য অর্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন সংগ্রহের জন্য ভারতজুড়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। তিনি যখন মাঠে খেলতেন না, তখনও আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিতেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মুখ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক হন। কিংবদন্তি এ খেলোয়াড় সেন্ট্রাল ব্যাক পজিশনে খেলতেন, একইসঙ্গে তিনি লাল-সবুজ জার্সিতে একজন অসাধারণ ডিফেন্ডার ছিলেন। দুই দশকের ক্যারিয়ার শেষ করার পর দেশের ক্রীড়া অঙ্গনকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন একজন পুরোদস্তুর স্পোর্টসম্যান।’ তিনি বলেন, ‘আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তার শোকসন্তপ্ত পরিবার এবং ক্রীড়া অঙ্গনের সংশ্লিষ্টজন, যাদের কাছে জাকারিয়া পিন্টু একজন সত্যিকারের কিংবদন্তী ছিলেন তাদের সকলের প্রতি আমার সমবেদনা।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তার শোকসন্তপ্ত পরিবার এবং ক্রীড়া অঙ্গনের সংশ্লিষ্টজন, যাদের কাছে জাকারিয়া পিন্টু একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি ছিলেন তাদের সবার প্রতি আমার সমবেদনা।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। ঢাকায় ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ৮১ বছর বয়সি ফুটবলারকে ভর্তি করেন তার পরিবারের সদস্যরা। পিন্টুর মেয়ের গতকাল সোমবার বিদেশ থেকে আসার কথা। আজ সকালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামসহ অন্য জায়গায় জানাজার পর বিকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত করা হবে তাকে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়কের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে ক্রীড়া উপদেষ্টা, বাফুফে, বিওএ, মোহামেডান, বিএসপিএসহ অন্য সংগঠনও। বাফুফের শোক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘বাফুফে জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। পিন্টু ছিলেন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এবং ফুটবলে তার অবদান অনস্বীকার্য।’ পিন্টু শুধু স্বাধীন বাংলা দলের অধিনায়কই ছিলেন না, খেলোয়াড়ি জীবন শেষে সংগঠকও ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের পরিচালক পদেও কাজ করেছেন। এর আগে দীর্ঘদিন ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিংকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পিন্টু। ১৯৪৩ সালের ১ জানুয়ারি নওগাঁয় জন্ম নেয়া এই কিংবদন্তি ফুটবল শুরু করেছিলেন পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টানা খেলেছেন মোহামেডানে। সেই ক্লাবের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ডাগআউট সামলেছেন জাতীয় দলেরও।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত