জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিগত সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সচিবসহ ১৩ জনকে হাজির করা হয়েছিল। এসব ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার সময় তাদের দুই একজন ছাড়া কারও আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। আর যারা এসেছিলেন তারাও পরিচয় দিতে চাননি। লজ্জায় মুখ লুকিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ ছেড়েছেন কেউ কেউ। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান করে এমন তথ্য জানা গেছে। গেটের পাশে উৎসুক জনতার ভিড়ও ছিল দেখার মতো। অনেকে এসেছেন সেই ১৩ জনকে একনজর দেখার জন্য। তবে আদালতের ভেতরে ঢুকতে হলে সাংবাদিকদের ট্রাইব্যুনালের দেয়া কার্ড ব্যবহার করতে হয়েছে। এছাড়া কাউকে অনুমতি দেননি সেখানে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা। আদালতের বাইরে ১৩ আসামিকে দেখতে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান। এই যুবক বলছিলেন, তিনি আগ্রহ নিয়েই এসেছেন। কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে নয়। তার ভাষ্য, এই ব্যক্তিরা তো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উদ্যোক্তা ছিলেন। তারাই আজ সেই আদালতের আসামি।
সাকিব বলছিলেন, এখানে কয়েকজন আসামির আত্মীয়-স্বজন এসেছেন। কিন্তু তারা পরিচয় দিচ্ছেন না। এমনকি ভয়ে কারও সাথে কথা বলছেন না। বিষয়টিতে তিনি অবাক হয়েছেন বলে জানালেন। বিষয়টি তার কাছে বিস্ময়ের বলে মনে হয়েছে। এসময় গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ লোকজনের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা গেছে। তবে কেউ কারও সাথে কথা বলছিলেন না। ট্রাইব্যুনালের গেটে অপেক্ষমাণ মানুষের বেশিরভাগই ছিল উৎসুক জনতা। তাদের মধ্যে কয়েকজনের আত্মীয়-স্বজনও ছিল। তবে তারা কেউ পরিচয় দিতে চাননি। পরিচয় না দিলেও তাদের মুখ ও আচরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। এসময় কয়েকজন ব্যক্তির সাথে এই প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলেও তারা এড়িয়ে যান। তবে আসামিদের আদালত থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার আগেই স্বজনরা চলে যান। দুপুর সোয়া একটার দিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে-মেয়ে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। তারা একটি প্রাইভেট কারে এসেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবার সাথে সেভাবে সাক্ষাৎও হয়নি তাদের। যাওয়ার সময় জাহাঙ্গীরের সন্তানদের বিষন্ন দেখাচ্ছিল। তারা এক আইনজীবীর সাথে ঘুরছিলেন। পরে গাড়িতে উঠে দ্রুত চলে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র চারজন আসামির আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকিদের কারও আইনজীবীও ছিলেন না।
দুপুর ঠিক দেড়টায় আদালত থেকে একে একে বের করা হয় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ডা. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শাহজাহান খান, সালমান এফ রহমান, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে।