আজ তারেক রহমানের ৬০তম জন্মদিন
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমিরুল ইসলাম অমর
বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রাণপুরুষ, তৃণমূল রাজনীতির প্রবক্তা, উৎপাদন-উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির রাজনীতিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬০তম জন্মদিন আজ। ১৯৬৫ সালের এইদিনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান। দেশের স্বাধীনতা-সার্ভভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ ও স্বনির্ভরতা অর্জন করতে গিয়ে দেশি-বিদেশি অপশক্তির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদতবরণ করায় মাত্র ১৫ বছর বয়সেই পিতৃহারা হন তারেক রহমান। দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল থেকে তিনি মাধ্যমিক ও ঢাকার বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে এবং পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তারেক রহমান। শিক্ষাজীবন শেষে ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। বস্ত্রশিল্পে বিনিয়োগ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যবসায় সফলতা লাভ করেন। পরে তিনি নৌ-যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করে সফলতা অর্জন করেন। তারেক রহমান ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান, সাবেক যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের মেয়ে ডা. জুবাইদা রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র কন্যা জায়মা রহমান সম্প্রতি লন্ডনের কুইনমেরি ইউনির্ভাসিটি থেকে আইন শাস্ত্রে ল’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
নন্দিত জননেতা তারেক রহমান কিশোর বয়সে ১৯৮১ সালে পিতাকে হারালেও পড়াশুনার পাশাপাশি স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তার মায়ের সহচর হিসেবে অংশ নেন। পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বগুড়া কমিটির সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে তারেক রহমান বগুড়া জেলার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন। আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনে যোগ দেয়ার আগেই তারেক রহমান রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রায় নেপথ্যে থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তারেক রহমান। ১৯৯৯ সালে অসহায় ও দরীদ্র জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করার লক্ষ্য নিয়ে গঠন করেন সামাজিক সংগঠন ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।’ ‘একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা, এনে দেবে সচ্ছলতা, দেশে আসবে স্বনির্ভরতা’ এই স্লোগানকে মূলমন্ত্র ধরে যাত্রা শুরু করা জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ভিশনারি প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান বিশ্বাস করেন আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ যদি ছোট ছোট উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাহলে এই দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি আসবেই। এ লক্ষ্যে তিনি প্রাথমিক অবস্থায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে, শিক্ষা খাতে, কৃষি খাতে বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক প্রকল্প গ্রহণ করেন। এরপর জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন আর থেমে থাকে নাই। বিভিন্ন জনকল্যানমূলক কাজের পাশাপাশি দেশের নানা দুর্যোগে জনগণের পাশে থেকে সেবা প্রদান ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে।
তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, অনবন্ধ পরিকল্পনা ও প্রজ্ঞার কারণে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় ২০০১ সালের নির্বাচনে। দীর্ঘদিন দলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেপথ্যচারীর ভূমিকা পালন করলেও অবশেষে ২০০২ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ষষ্ঠ কাউন্সিলেও তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় কারাগারে প্রেরণ করলে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
এক-এগারোর সরকার তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ায় দীর্ঘ আঠারো মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয়ে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাড়ি জমান তারেক রহমান। ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি তারেক রহমান লন্ডনে নির্বাসিত জীবন অতিবাহিত করছেন। এর মধ্যে সহোদর ভাই আরাফাত রহমান কোকোর জীবনাবসান অথবা মা বেগম খালেদা জিয়ার আইসিইউর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের মুহূর্তেও তিনি তাদের কাছে থাকতে পারেননি। প্রায় অর্ধশতাধিক মামলার খড়গ বা শারীরিক নির্যাতনের অসুস্থতা নিয়েই ফ্যাসিবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন। আয়াতুল্লাহ আল খোমেনি বা তারেক রহমানের ক্ষেত্রে ইতিহাস যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। প্যারিসের নির্বাসন জীবন খোমেনিকে বিশ্বের কাছে তার বক্তব্যকে পৌঁছে দিতে সহায়তা করেছে। লন্ডনের নির্বাসনে থেকেও তারেক রহমানকেও করেছে অপ্রতিরোধ্য। দেশের মিডিয়া তার বক্তব্য প্রচার করতে না পারলেও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের আনাচে-কানাচে তৃণমূল থেকে জাতীয় পরিসরের নেতাদের সাথে তিনি যুক্ত থেকেছেন, সবাইকে রেখেছেন ঐক্যবদ্ধ। প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার দূরে বসেও গণতন্ত্রকামী কর্মী-সমর্থকদের কাছে তাঁর উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিকের মতোই। দূরে থেকেও তিনি ছিলেন তাদের সাথেই। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
একটি রাষ্ট্রের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে জাতীয় ঐক্যের সুসংহত অবস্থানের উপর। ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের প্রারম্ভ থেকেই তারেক রহমান জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রস্তাব উপস্থাপন করে আসছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত-আহতদের পাশে দাড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আমরা বিএনপি পরিবারের প্রধান পৃষ্পপোশক তারেক রহমান। তিনি সারাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার ও আহত, পঙ্গুত্ব বরনকারীদের নগদ টাকা, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, রিকশা, গরু, ঘর দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। অবশ্য ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পূর্বেই ১৩ জুলাই ২০২৩ তারিখ সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা রূপরেখা তুলে ধরা হয়। এরও পূর্বে ভিশন ২০৩০ রূপকল্পের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের একটি রূপরেখা প্রকাশ করা হয়। তারেক রহমান বারবার প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে আসছেন। ফ্যাসিজমের উৎখাতের পর তিনি জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রয়াস চালাচ্ছেন। তার বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন, পেশীশক্তির উত্থানের পরিবর্তে জনমানুষের পক্ষে কাজ করে জনসমর্থন সৃষ্টির বার্তা দিচ্ছেন। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিএনপির প্রায় অর্ধ-সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করে তিনি বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের প্রতি নৈতিক রাজনৈতিক চর্চার জন্য কঠোর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিবেশের গুণগত পরিবর্তনের গোড়াপত্তন করবে। বিএনপির মতো সর্ববৃহৎ দলের গুণগত পরিবর্তনের এই উদ্যোগ অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তিসহ জাতীয় রাজনৈতিক পরিসীমায় এক নবতর সাম্য ব্যবস্থার সৃষ্টি করবে।
সহস্রাধিক শহীদের প্রাণ, পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্বের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মীদের আত্মত্যাগ থাকলেও তিনি এযাবৎ কৃতিত্বের অংশীদারিত্ব দাবি করেননি, বরং বহুল কাক্ষিত এই বিজয়ের মহানায়ক হিসেবে তিনি রাজপথে জীবন বিলিয়ে দেয়া সেইসব বীর ছাত্র-জনতাকেই মহানায়ক হিসেবে অলংকৃত করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের এই সরকারকে সফলতা বা ব্যর্থতাকে সকলের সফলতা বা ব্যর্থতা হিসেবে দেখেছেন, এই সরকার যেন ব্যর্থ না হয় এ বিষয়ে তিনি সকলের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে তিনি প্রতিনিয়ত গণঅভ্যুত্থানের সরকারকে সুসংহত করাসহ বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়া ও পরোক্ষ ঐকমত্য সৃষ্টির প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। ৩১ দফার মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যতের যে বাংলাদেশের রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলেছেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের প্রস্তাব এনেছেন। জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’-কে সামনে রেখে শিক্ষা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের সহযোগে নতুন অভিযাত্রার অভিপ্রায় তুলে ধরেছেন। তিনি তার ভাবনায় পরিবেশ, অর্থনীতি, পল্লী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ রাষ্ট্রকাঠামোর সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের গুণগত পরিবর্তনের রূপকল্প উপস্থাপন করেছেন। পাশাপাশি সারা দেশে অসহায় ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহত পরিবারগুলোকে দিয়ে যাচ্ছেন সাধ্যমতো সহযোগিতা। তার সঠিক নেতৃত্বই এদেশের মানুষকে এনে দিয়েছে স্বস্তিতে নিশ্বাস ফেলার অধিকার। ফিরে পেয়েছে সকল দলের রাজনীতি করার অধিকার।