প্রায় তিন ঘণ্টা সংঘর্ষ শেষে নিজেদের ক্যাম্পাস ছেড়েছেন ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে সড়ক থেকে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর রোডের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সড়ক থেকে ঢাকা কলেজ অডিটরিয়ামে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টায় সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া হয়। ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৬ জন আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সিটি কলেজের এক শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড কেড়ে নেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সিটি কলেজ এলাকায় ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। পরে ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী সিটি কলেজে আক্রমণ করে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন। দুপুরের পর ঢাকা কলেজের একটি বাস সিটি কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কলেজের শিক্ষার্থীরা ওই বাসে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ খবর ঢাকা কলেজে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে সিটি কলেজে যান। এরপরে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেলে ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) রাজিব সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বেলা ৩টার দিকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর করেছে শুনেছি। ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে, তবে এখনও উত্তেজনা চলমান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজের সামনে এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় এবং ইটপাটকেল ছোড়েন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের দিকে হামলা চালান। এতে ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করা হয়। এরপর পুলিশ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দিকে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তখন সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেয়ে আবার ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন, তখন তাদের দিকেও টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষই পিছু হটে। দেখা গেছে, পরে ধাওয়া খেয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভেতরে অবস্থান নিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর চড়াও হন। এ সময় কলেজের ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। পরে ক্যাম্পাসে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রবেশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাইরে চলে আসেন।
ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবায়ের আরেফিন প্রিয় অভিযোগ করেন, আজ আনুমানিক দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলেজ থেকে হেঁটে বাসায় ফেরার সময় ধানমন্ডি ১ নম্বর রোডে ১০-১৫ জন কলেজ ছাত্র দৌড়ে এসে আমার মাথার পেছন দিকে আঘাত করতে শুরু করে। শার্টের পকেট ছিঁড়ে আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয়। আমি তাদের বলি, ভাই আমি তো কিছুই করিনি, তাহলে কী সমস্যা। তারা বলল, এইটা কলেজে কলেজে মারামারি, তুমি বুঝবে না। ছেলেগুলো কলেজ ড্রেস পরে ছিল; কিন্তু গলায় কোনো আইডি কার্ড ছিল না। সাদা শার্ট-কালো প্যান্ট ও ঘাড়ে ব্যাগ ছিল। আশপাশের মানুষের মন্তব্যে বোঝা গেছে তারা সিটি কলেজের ছাত্র। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দুই প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের মধ্যে সংঘর্ষে আহত অনেক শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন। কেউ কেউ চিকিৎসাসেবা নিয়ে চলে গেছেন। কয়েকজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।