সড়ক-রেললাইন আটকে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুরের পর অবশেষে সড়ক ছেড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। মহাখালী এলাকার পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক হয়েছে’ জানিয়ে, বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার বলেছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার পর এই এলাকার যান চলাচল শুরু হয়েছে। আরো এক ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মহাখালী রেইলগেট এলাকায় বিপুল পরিমাণ সেনা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে সকাল ৯টার পর থেকে মহাখালী রেইলগেট এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকরা। ১০টার দিকে চালকরা সড়কে নামলে এই এলাকায় রেলক্রসিংয়ের দুই দিকে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
এ ছাড়া মহাখালী রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নেয়ায় কমলাপুরের সঙ্গে সারাদেশের ‘ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি জয়নাল আবেদিন জানিয়েছিলেন। বিকাল ৪টায় পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন ট্রেন চলাচলের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহাখালী এলাকায় দুপুর ১টার দিকে অটোরিকশা চালকদের সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীরা অবিরাম ঢিল ছোড়া শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তখন ‘পিছু হটে যান’। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ও আশপাশের কয়েকটি ভবনেও ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করতে দেখা যায়। দুপুর ২টার পর থেকে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা কমতে থাকে। একপর্যায়ে পৌনে ৩টার দিকে মহাখালী এলাকায় শতাধিক অটোরিকশা চালক ছিলেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা বিক্ষোভকারী চালকদের রাস্তা থেকে ‘সরিয়ে দিলে’ ৩টার পর মহাখালী রাস্তায় যান চলাচল শুরু হয়। সকাল থেকেই মোহাম্মদপুর, রামপুরা, আগারগাঁও, মিরপুর, গাবতলী মাজার রোড, মালীবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ‘আটকে’ বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা। অনেক জায়গাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সড়কে অটোরিকশা চলকদের দীর্ঘসময় অবস্থানের কারণে রাজধানীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দিনভর গন্তব্যে যেতে-আসতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানীর মানুষকে। দারুস সালাম থানার ওসি রকিব-উল-হোসেন বলেন, ‘সকাল ১০টার পর মাজাররোড এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। আধাঘণ্টার মধ্যেই আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে পেরেছি। বর্তমানে আমার থানা এলাকার সব সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’ পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান জানিয়েছিলেন, মোহাম্মদপুর তিনরাস্তার মোড়, শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁও এবং নাখালপাড়া এলাকায় সড়ক বন্ধ করে রিকশাচালকরা।
দিনভর মিরপুর এলাকায় সড়ক অবরোধের চেষ্টা ও দফায় দফায় মিছিলের পর বিকালে ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে’ বলে জানিয়েছেন মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মাকছেদুর রহমান। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মিরপুর ১৩ নম্বর থেকে মিছিল বের করে ১০ নম্বর গোলচত্বরে গিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে অটোরিকশা চালকরা। তবে তাদের সেখানে বসতে দেয়নি সেনাবাহিনীর সদস্যরা। একপর্যায়ে তারা সড়কের পাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। উচ্চ আদালত থেকে ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ আসে গত মঙ্গলবার। প্যাডেল চালিত রিকশা সমিতি করা একটি রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইজিপি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে হাই কোর্ট। আদালত বলে, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এটা পুরোপুরি অবৈধ।’ এর পরদিনই ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল অব্যাহত রাখার দাবিতে দয়াগঞ্জ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা। রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন বুধবার এক বিবৃতিতে হাই কোর্টের দেয়া আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এর আগে গত মে মাসে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত কোনো রিকশা চলাচল করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিদ্যুৎচালিত তিন চাকার যানগুলো অটো, ইজিবাইকসহ নানা নামে পরিচিত। দুর্ঘটনার জন্য সড়কে মোটরবাইক এবং ইজিবাইকের চলাচলকে দায়ী করেন তিনি। সে সময় ঢাকার সাবেক দুই মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আতিকুল ইসলামও শহরের মধ্যে এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে তাদের সম্মতি জানিয়েছিলেন। পরে ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকায় সড়ক অবরোধ করেন চালকরা ও গ্যারেজ মালিকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংক্ষুব্ধ চালকদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে ‘জীবিকার’ বিষয়টি বিবেচনায় এনে ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করবে পারবে বলে ঘোষণা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।