রাজনীতি থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে ড. ইউনূসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের প্রকৃত উন্নতির জন্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তন নয়, বরং রাজনৈতিক সংস্কারেরও প্রয়োজন। তবে, তার লক্ষ্য একেবারেই সৎ, উদ্দেশ্য দারিদ্র্য দূরীকরণ। তিনি মনে করেন, রাজনীতির মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি কার্যকর নির্বাচনিব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে, তবেই সমাজে সঠিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। সম্প্রতি দেশের ইংরেজি জাতীয় গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে, ড. ইউনূসের নতুন দৃষ্টি যেন নতুন আলো নিয়ে এসেছে। তিনি বলেছেন, শুধু সামাজিক কাজকর্ম দিয়ে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়, এজন্য রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত হতে হবে। তার মতে- দেশের সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাজনৈতিক নেতা এবং দলগুলোর মধ্যে একতা এবং রাজনৈতিক সংস্কারের বিকল্প নেই। ড. ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে তার উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকটি আজ বিশ্বের অন্যতম সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত, যেখানে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন। তিনি যেমন সামাজিক ব্যবসার ধারণা দিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সহায়তা করেছেন, তেমনই তিনি দেশের রাজনৈতিক চিত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ড. ইউনূস বারবার তার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এবং জনগণের প্রকৃত উন্নতির জন্য, রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। তার মতে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন, যেখানে নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা তৈরি হবে। শুধু সামাজিক কাজকর্ম দিয়ে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়, এজন্য রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত হতে হবে। দেশের সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাজনৈতিক নেতা এবং দলগুলোর মধ্যে একতা এবং রাজনৈতিক সংস্কারের বিকল্প নেই। ড. ইউনূসের মতে- অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক সমৃদ্ধির জন্য একটি সুদৃঢ় রাজনৈতিক কাঠামো এবং উন্নত নির্বাচনিব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দেশের তরুণদের কাছে বার্তা দিয়েছেন যে, তারা আগামী দিনে নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং একটি কার্যকর সরকার প্রতিষ্ঠায় তাদের ভূমিকা পালন করবে। ড. ইউনূস তার উদ্যোগগুলোতে কখনোই শুধু নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের জন্য কাজ করেননি। তিনি মনে করেন, সমাজের প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার থাকা উচিত, এবং সেই অধিকার বাস্তবায়নে রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সহজ হবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। তিনি আরও জানান, রাজনীতি শুধু ক্ষমতার লোভে নয়, বরং দেশের জন্য এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। একমাত্র তখনই রাজনৈতিক দলগুলো প্রকৃত অর্থে জনগণের পাশে থাকবে এবং দেশের অগ্রগতির জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ড. ইউনূসের কথায়, ‘যখনই সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, তখন আমি লক্ষ্য করেছি যে আমাদের সমাজের পরিবর্তন এবং উন্নতির জন্য শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী নয়, বরং সঠিক রাজনৈতিক চেতনা এবং পরিবেশ প্রয়োজন।’ তার মতে, সামাজিক উদ্যোগ এবং রাজনীতি একে অপরকে পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে, যা দেশে সঠিক পরিবর্তন আনার পথ সুগম করবে। ড. ইউনূস আরো বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। এখনই সময় দেশের যুবসমাজকে আরো বেশি রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরি করার। তিনি মনে করেন, যদি দেশের জনগণ এবং তরুণরা একসঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য কাজ করতে পারে, তবে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। যখনই সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, তখন আমি লক্ষ্য করেছি যে আমাদের সমাজের পরিবর্তন এবং উন্নতির জন্য শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী নয়, বরং সঠিক রাজনৈতিক চেতনা এবং পরিবেশ প্রয়োজন। সামাজিক উদ্যোগ এবং রাজনীতি একে অপরকে পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে, যা দেশে সঠিক পরিবর্তন আনার পথ সুগম করবে। তবে, তার রাজনীতিতে আসা শুধু এক তরফা কোনো সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ লক্ষ্য, যেখানে রাজনীতি এবং সমাজকর্ম একসঙ্গে মিলিত হয়ে দেশের ভবিষ্যত পরিবর্তন করবে। তার এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে তিনি জনগণের কল্যাণ এবং সামাজিক পরিবর্তনকে সবার আগে গুরুত্ব দিয়েছেন, এটি অনেকটাই সময়োপযোগী বলে মনে হচ্ছে। ড. ইউনূসের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি রাজনীতি ও দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। তার প্রচেষ্টা বাংলাদেশে এমন একটি সমাজব্যবস্থা তৈরি করার দিকে ঠেলে দিতে পারে, যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন এবং জনগণের উন্নতি সবার অগ্রাধিকারে থাকবে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য, যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকট একসময় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে ড. ইউনূসের পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে তা দেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। তার এই চিন্তা এবং উদ্যোগ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে। ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কোনো দলগত রাজনীতির দিকে নয়, বরং একটি সামাজিক পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। তার লক্ষ্য হলো রাজনীতির মাধ্যমে সমাজে সঠিক পরিবর্তন আনা এবং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। এমন একটি লক্ষ্য, যা নিশ্চিতভাবে দেশের সব স্তরের মানুষকে একত্রিত করতে সক্ষম হবে। আজকের দিনে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকট বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন ড. ইউনূসের এ পরিকল্পনা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করবে। তার এই নীতির ভিত্তিতে দেশের মানুষ আশা করতে পারে যে, রাজনীতির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব এবং একটি সুশাসিত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।