নতুন ইসির শপথ আজ
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরিফুল ইসলাম
নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার নির্বাচন কমিশনার আজ রোববার শপথ গ্রহণ করবেন। আজ রোববার দুপুর দেড়টায় সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল শনিবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এ কথা জানিয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার (আজ) দুপুর দেড়টায় সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। গত ২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনারের সমন্বয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনাররা হচ্ছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে বলা হয়, অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর করা হবে। অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির প্রস্তাবিত তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন। এখন নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আজ রোববার শপথবাক্য পাঠ করাবেন।
জানা গেছে, নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন বিসিএস ১৯৭৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তিনি ২০০৪ সালে তথ্য সচিব, এরপর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, তারপর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং সবশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি অবসরে যান। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের দাবি ওঠে। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীন বলেন, দেশ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। এখন আমার দেওয়ার পালা। এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষের প্রত্যাশা- সুন্দর নির্বাচন। সেই প্রত্যাশা পূরণের একটা সুযোগ পেয়েছি। এ সুযোগ অর্জনে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত রাখব। এটা আমার কমিটমেন্ট।
সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কোনো রকম চাপ অনুভব করছেন কী? জবাবে সিইসি বলেন, চাপ অনুভব করছি, তা নয়। আবার করছি না, তাও নয়। কাজের চাপের কথা বললে এসব মোকাবিলায় আমি অভ্যস্ত। আমি ওভাবেই প্রশিক্ষিত। সরকারি চাকরিতে চাপ মোকাবিলার জন্য সবসময়ই প্রস্তুত থাকতে হয়েছে। এখানেও অনেক ধরনের চাপ থাকবে। সবাইকে নিয়ে সেসব মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাব এবং ফলপ্রসূ হবো ইনশাআল্লাহ।
আগের সিইসি-ইসি নিয়ে সবসময়ই বিতর্ক ছিল, তারা সমালোচনা এড়াতে পারেননি। উপরন্তু ছিল রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নানাবিধ চাপ। এ বিষয়ে সাবেক এই আমলা বলেন, বিতর্ক এড়াতে আমার একটা অ্যাডভানটেজ আছে। যারা বিতর্ক করবেন (রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ), তারা সবাই কিন্তু গত ১৫-১৬ বছর ধরে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যুদ্ধ করেছেন। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেকে নিহত, আহত, গুম হয়েছেন। তারা তো ভালো নির্বাচন চান, আমি এটাকে ফ্যাসিলেটেড করব। তাদেরও আমি সঙ্গে পাব। যেটা আগে পাওয়া যায়নি। আগে সব দলকে পাওয়া যায়নি।
যিনি ক্ষমতায় ছিলেন, তিনি অন্যদের একত্রিত করতে চাননি। কিন্তু আমাদের তো এখন সেই সমস্যা নেই। আমাদের তো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ নেই। আমরা নিরপেক্ষ, একদম রেফারির ভূমিকায়। অন্তর্বর্তী সরকারও রেফারির ভূমিকায় কাজ করছে। তাই রাজনৈতিক সব দল ও প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে সুষ্ঠুভাবে খেলার সুযোগ পাবে। আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেব, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে দেব। তারা খেলবেন। তারা যে ফেয়ারলি খেলতে চান, এই কথাটি তারাও বারবার বলে আসছেন। কাজেই আমরা তাদেরও সঙ্গে পাব।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রত্যাশা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য গত ১৫-১৬ বছরে অনেক লোক প্রাণ দিয়েছেন। সম্প্রতি জুলাই আন্দোলনে দেড় হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। ২৫ থেকে ২৬ হাজার লোক পঙ্গু, আহত হয়েছেন। ১৩০টি শিশু মারা গেছে। এই যে এত এত মানুষ শহীদ হলো। তাদের মূল দাবির মধ্যে একটি হলো- ভোটের অধিকার। যদি আমরা ফেল করি অথবা গাফিলতি করি তাহলে এটা তো শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। এটা আমরা কোনো মতেই হতে দেব না। ওদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করার কোনো সুযোগ নেই। এটা আমাদের মাথায় ও বুকের মধ্যে থাকবে যে, ভোটের জন্য এত লোক প্রাণ দিয়েছে, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। সেটা মনে রেখে আমরা কাজ করব।