প্রায় ৫ হাজার ৯১৫ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে বিদেশি ঋণ ও সরকারি তহবিল। গতকাল সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে খুলনার মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নিঃসৃত তেল অপসারণসহ মোট পাঁচটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠকটি রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা।
বৈঠকের মূল সিদ্ধান্ত ও অর্থায়ন : বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, পাঁচটি প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিদেশি সহায়তা থেকে আসবে। সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে যোগ হবে আরো ৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, এবং বাকি ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা সরকারি নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। এই অর্থের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
অনুমোদিত পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে প্রধান বিষয়বস্তু : ১. মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও তেল অপসারণ ব্যবস্থা: মোংলা বন্দরে নতুন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং তেল নিঃসরণ অপসারণ ব্যবস্থা স্থাপন করে তা আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি মোংলা বন্দরের পরিবেশগত এবং কার্যকরী মান উন্নয়নে সহায়তা করবে। পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের ক্ষমতা ও উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ আরো সুরক্ষিত ও আধুনিক করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাপাসিটি বিল্ডিং : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব ইউনিভার্সিটিজ ইন বাংলাদেশ টু প্রমোট ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ’ প্রকল্পটি যুব উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত হয়েছে।
চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশন উন্নয়ন : পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন (ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪)’ প্রকল্পটি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে এবং এলাকাবাসীর জীবনের মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ইমার্জেন্সি প্রকল্প : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ইমার্জেন্সী মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সহায়তা এবং বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হবে।
সরকারি ও বিদেশি সহযোগিতায় উন্নয়ন পরিকল্পনা : এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে বিদেশি সহযোগিতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে। প্রকল্পগুলোর ব্যয়ের বড় অংশই বিদেশি সহায়তা থেকে আসবে, যা উন্নয়ন কাজে বিশেষ সহায়তা প্রদান করবে। বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিরা উল্লেখ করেন যে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা হবে এবং বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের এই বৈঠকে সরকারের উন্নয়ন উদ্যোগের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করতে এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে খুলনা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, সরকার এবং অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন খাতে অবকাঠামোগত এবং পরিবেশগত উন্নয়ন সাধিত হবে।