দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চলছে
মির্জা ফখরুল
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
‘পতিত স্বৈরাচার পেছন থেকে আবারো দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে’ অভিযোগ করে সকলকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে ‘তারেক রহমান: পলিটিক্স অ্যান্ড পলিসিস কনটেমপরারি বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। গ্রন্থটির লেখক মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের ‘উড ব্রিজ’। অনুষ্ঠানস্থলে গ্রন্থটি এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ৫৭১ পৃষ্ঠার গ্রন্থে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জীবন-কর্মণ্ডরাজনীতির নানা দিক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
গত দুই দিনে রাজধানীতে সহিংস ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেশের চারিদিকের অবস্থা দেখে অনেকে একটু আতঙ্কিত হচ্ছেন, একটু উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, এগুলো কি হচ্ছে? আসলে আপনাদের বুঝতে হবে... আমাদের সেই শত্রুরা যারা সামনে থেকে চলে গেছে, পেছনে থেকে তারা দেশকে আবার অস্থির করে তুলছে। এখানে আমাদের অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমাদের দেশের মানুষেরা কেনো জানিনা সহনশীলতার অভাব হয়ে গেছে। একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। কারণ এই সরকার ফেল করলে অভ্যুত্থান ফেল করে যাবে, বিপ্লব ফেল করে যাবে, আমরা আবারো সেই অন্ধকারে চলে যাবো। সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার মনে হয় আপনাদের পজেটিভ চিন্তা করা প্রয়োজন।
মির্জা ফখরুল বলেন, একটা বিষয় অত্যন্ত জরুরি বলে আমি বলতে চাই, দুর্ভাগ্যক্রমে আজকে একটা ভয়াবহ কাজ শুরু হয়েছে, যেটা হচ্ছে- সংবাপত্রের ওপর আঘাত, স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে আঘাত। যার জন্য আমরা সব সময় সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তিনি প্রথম সংবাদপত্রকে মুক্ত করেছিলেন। সেদিন বনিকবার্তার সম্পাদক তিনি আমাকে বলছিলেন যে, আপনারা এই বিষয়টাকে জোরে বলেন না কেনো যে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছে খালেদা জিয়ার সময়ে, বিএনপির সময়ে, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যেসমস্ত কোমলমতি বালকরা, ছাত্ররা তারা যেসমস্ত কাজ করছে তাদের এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে, এটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এই সরকারের পক্ষে সব কিছু একসাথে করে ফেলা সম্ভব নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি প্রায় সবসময় এই কথাটা বলি যে, ইচ্ছা করলেই, চেষ্টা করলেই কাউকে ম্লান করে দেয়া যায় না, উড়িয়ে দেয়া যায় না, ইতিহাসকে বিকৃত করা যায় না। কিউবার ফিদেল কাস্ট্রো তিনি যুদ্ধ করতেন প্রথম দিকে, সেই যুদ্ধের সময়ে তিনি বাতিস্তার হাতে গ্রেফতার হলেন, গ্রেফতারের পরে তার বিচার হলো সেখানে ১২ বছর সাজা হয়েছিলো। সেই সময়ে কাস্ট্রো বিচারকদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, কনডেম মি ডাজেন্ট মেটার, হিস্ট্রি উইল এবজোরড মি, আমাকে তোমরা এখন কনডেম করতে পারো কিন্তু ইতিহাস আমাকে ধারণ করবে।
সেই ইতিহাস ধারণ করেছে জিয়াউর রহমানকে, বেগম খালেদা জিয়াকে, তারেক রহমানকে। ইনশাআল্লাহ জীবন্ত ইতিহাস তারেক রহমান আমাদের আলোকিত বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাবেন- এই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।
তারেক রহমানসহ জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্মম নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা পরিবারের ওপরে কি পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন হতে পারে, একটা ইয়াং সম্ভাবনাময় নেতা তার ওপরে কীভাবে নির্যাতন হতে পারে তা এই জিয়া পরিবারকে এবং তারেক রহমান সাহেবকে না দেখলে আমরা বুঝতে পারব না। তার (তারেক রহমান) উপরে নিদারুণ নির্যাতন হয়েছে, শারীরিক নির্যাতন হয়েছে, মানসিক নির্যাতন হয়েছে। অথচ দেখেন এই নেতা তিনি কখনো থেমে যাননি এবং মাথানত করেননি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ও সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- সাংবাদিক শফিক রেহমান, চারুকলা ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, গবেষক মোবাশ্বর হোসেন, শরীফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম আজাদ, মাহবী আমিন, আনোয়ার হোসেন খোকন, সেলিম রেজা, শামা ওবায়েদ, আফরোজা আব্বাস, বাসস পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, কুটনীতিক ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।