আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থি সংগঠন দাবি করে চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে ‘ইসকন’কে নিষিদ্ধের দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন কয়েকজন আইনজীবী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবরে ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল ১০ আইনজীবীর পক্ষে এই নোটিশ পাঠান।
আন্তর্জাতিক সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী আল মামুন রাসেল। গতকাল বুধাবার ১০ আইনজীবীর পক্ষে আল মামুন রাসেল এ লিগ্যাল নোটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর ডাকযোগে প্রেরণ করেন। ১০ আইনজীবী হলেন মফিজুর রহমান মোস্তাফিজ, নিজাম উদ্দিন, আব্দুল হান্নান ভূঞাঁ হৃদয়, তৌহিদুল ইসলাম শান্ত, আতিকুল ইসলাম, মাসুম বিল্লাহ, রাসেল মাহমুদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাহফুজুর রহমান ও আল মোমেন। লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে ‘ইসকন একটি উগ্রপন্থি সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উসকানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে- সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি। (বই- বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা- বাংলাদেশে ‘র’ পৃষ্ঠা:১৭১)। এ সংগঠনটি হিন্দুদের অধিকাংশ বেসিক কনসেপ্ট স্বীকার করে না। তারা হিন্দুদের ওপর সম্পূর্ণ নিজস্ব কনসেপ্ট চাপিয়ে দেয়। এরা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের দলে ভিড়িয়ে দল ভারি করে। সনাতন মন্দিরগুলো দখল করা এবং সনাতনদের মেরে পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়া। বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে সাম্প্রদায়িক হামলা করা। কিছুদিন আগে ঢাকার স্বামীবাগে মসজিদের তারাবির নামাজ বন্ধ করে দিয়েছিল ইসকন। নামজের সময় ইসকনের গান-বাজনা বন্ধ রাখতে বলায়- তারা পুলিশ ডেকে এনে তারাবির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে বিষয়টি নিয়ে সংঘর্ষ হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরি করে, উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটানো। নোটিশে আরো বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় যে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর থেকে দেশে বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পেছনেও সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সংগঠনটি বাংলাদেশে ইতোপূর্বে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যেমন- ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রশিক রায় জিউ মন্দিরে দুর্গাপূজা নিয়ে ইসকনপন্থি ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইসকনভক্তদের হামলায় ফুলবাবু নামে একজন নিহত হন। ফলে ১৪ অক্টোবর ২০১৮ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের রায় জিউ মন্দিরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। ২০২১ সালের ১৪ মার্চ ইসকন মন্দির থেকে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবর্তক সংঘের কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায় এতে ১২ জন আহত হয়। ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের ইসকন মন্দির থেকে বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের ভিডিও ফাঁস হয়, ইসকন মন্দিরে ধর্ম পালনের নামে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি অস্ত্র রাখে। গোপালগঞ্জে ইসকনের মিছিল থেকে পুলিশের গাড়িতে হামলা চলায় ও গুলি ছোড়ে। চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপ, যৌথ বাহিনীর ১২ সদস্য আহত (২০০৪ সালের নভেম্বর)। নোটিশে বলা হয়েছে, সংগঠনের প্রধান চিন্ময়ের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করায় রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হলে গত মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) আদালতে উপস্থাপনের পর সংগঠনের নেতাকর্মীরা সম্মিলিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মমভাবে জনসম্মুখে কুপিয়ে হত্যা করে। এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, সংগঠনটি দেশের আইন-কানুনকে তোয়াক্কা করে না, নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে, আইন-আদালতের প্রতি ও সরকারের প্রতি ইসকনের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। দেশে সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পরিকল্পনা নিয়েই চিন্ময় কৃষ্ণ কাজ করছিল এবং সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে এ ধরনের সন্ত্রাসী সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি করে আসছে। নোটিশে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ আরো বেশকিছু রাষ্ট্রে ইসকন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ ছাড়াও তাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে ইসকনের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে তাদের কার্যক্রমের ভিত্তিতে তাদের নেয়া বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উসকানিমূলক কার্যক্রম এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আঁতাত করাসহ তাদের সব জঙ্গি কার্যক্রম বন্ধ করা এখন সময়ে দাবি। ইসকনের এসব ঔদ্ধত্বপূর্ণ কার্জক্রম এখনই বন্ধ করা না গেলে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে আসবে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ১৮ ধারার বিধান মতে, কোনো ব্যক্তি বা সত্ত্বা কোনো সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। ইসকন নামে উগ্রপন্থি সংগঠনের বিগত ও বর্তমান সময়ের কার্যক্রমগুলোকে অত্র আইনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে বিধায় অত্র আইনের বিধান মোতাবেক অত্র সংঘঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়া একান্ত আবশ্যক বটে।