গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, অনেক সময় আমরা হারিয়েছি, আর সময় হারানো যাবে না। এখন জরুরিভিত্তিতে ঐক্য সৃষ্টি করে, সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লবের আবদুস সালাম হলে ৩৪তম মিলন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, অনৈক্যের জন্যই কিন্তু আমাদের আজকের এই অবস্থা, আমরা এগোতো পারিনি। আজকে আমাদের প্রয়োজন হলো- যে দলগুলো আছে, তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামানো। দেরি না করে আমাদের এটা করা দরকার। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষকে নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, অনৈক্যের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। একদিকে না গিয়ে আমরা বিভিন্ন দিকে ছুটবো। এই জিনিসটাকে আমরা উপলব্ধি যত দ্রুত করি ততই ভালো। দেশের প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, এখন আমাদের সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে একটা কর্মসূচি সামনে আনতে হবে। সব মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে যদি আমরা সামনে আগাই, তখনই সম্ভব হবে আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করা। অনেক সময় আমরা হারিয়েছি, আর সময় হারানো যাবে না। এখন জরুরিভিত্তিতে ঐক্য সৃষ্টি করে, সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, ডা. মিলন, নূর হোসেনদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় ’২৪-এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আরেক স্বৈরশাসকের বিদায় নিতে হয়েছে। জুলাই-আগস্ট ’২৪-এর ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে প্রায় দেড়-সহস্রাধিক শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ডা. মিলন-নূর হোসেনসহ ’২৪-এর জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতা যে কারণে জীবন দিয়েছেন, তাদের স্বপ্নের আকাঙ্ক্ষার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সেই আত্মত্যাগ স্বার্থক হবে।
গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি বলেন, আমাদের এখন অঙ্গীকার করতে হবে যে, এবার গণঅভূত্থানের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন কোনও অশুভ শক্তির দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়। ড. কামাল হোসেন বলেন, ১৯৯০-এর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মাইলফলক ঘটনা শহীদ ডা. মিলন হত্যাকাণ্ড। ২৭ নভেম্বর ’৯০-এর সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে ৬ ডিসেম্বর ’৯০ স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে। সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, আমি সরাসরি বলতে চাই- এটা কোনো প্রো-অ্যাকটিভ গভর্নমেন্ট না। প্রো-অ্যাকটিভ গভর্নমেন্ট হলে একের পর এক ইসকন বা এরকম ঘটনা ঘটতো না। এগুলো কীভাবে করে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মোদি সরকার এবং ভারতের একশ্রেণির মিডিয়া যেভাবে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, বাংলাদেশের বিরোধিতা, অভ্যুত্থানের বিরোধিতা বা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধী যে আগ্রাসী ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে, কোনোভাবেই এই দেশের মানুষ রাজনৈতিক দল ছাত্র-জনতা সে ফাঁদে পা দিতে পারি না। এ সময় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান প্রমুখ।